উত্তরাঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৭টি নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা।।
আন্তর্জাতিক নদী শাসন আইনকে অমান্য করে একতরফাভাবে ভারতীয়দের নদী শাসনের কারণে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মানচিত্র থেকে ৫৭টি নদী হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর ওপর ভারতের একের পর এক বাঁধ দেয়ায় নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে নেমে আসা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ ও তিস্তা নদীর ওপর গজলডোবা ব্যারেজ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় রংপুর বিভাগীয় অঞ্চলের জেলাগুলোর ৫৭টি নদী আজ প্রায় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া আরো ১০টি নদী সংকটপন্ন অবস্থায় রয়েছে। নদীর কূলবর্তী বসবাসরত মানুষেরা জানায়, কয়েক মাস আগেও সেখানে ছিল অথৈ পানি। বন্যার সময় সেখানে নৌকা দিয়ে যেতেও সাহস হতো না কারো কারো। আজ সে স্থানে ধু- ধু বালুচর। হেঁটে হেঁটে কিংবা সাইকেল বা মহিষের গাড়ী চালিয়ে নদী পার হওয়া যায়। অবাধে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা যায়। এছাড়াও নদীর বুকে বোরো ধান, মসুর ডাল, পিয়াজ, রসুন, গম, তামাক ও গরু-ছাগল চরার মধ্যে পরিণত হয়েছে। তবে কৃষকদের মতে, মরুভূমি নদী এমন আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বর্ষা মওসুমে ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, আঙ্গরপোতার উপর দিয়ে প্রবাহিত সানিয়াজান, তিস্তা, ধরলা ও মরাসতী নদীতে আংশিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েক শত বিঘা জমির চাষ এবং শত শত পুকুরের মাছ ভেসে যায়। বর্তমানে গজলডোবা ব্যারেজের মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক নদী শাসন আইন অমান্য করে তিস্তার পানি প্রত্যাহার সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম ভেস্তে যেতে বসেছে। ৩১টি নদী ইতোমধ্যে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এগুলো হলোঃ লালমনিরহাটে তিস্তা, ধরলা, সতি নদী, গিদারী নদী, কুড়িগ্রামের জিনজিয়াম, রংপুরের নলেয়া, আলাইকুমারী, সরতিস্তা, নীলফামারীর খড়মড়িয়া, খারুয়া, সিনাই চাড়া দুল্লাই, আউলিয়া মানা, দিনাজপুরের নালশিসা কালা, গড়েশ্বরী, ইছামতি, মাইলা, পাথর ঘাটা, নত, বেলান, তুলসিগব্দা, ছোট যমুনা, চিরি, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়ের ভুল্লি, ঠাঁকুরগাঁয়ের চেপা, আমোনদামোন ও লোনালাচ্ছি। তবে নদী গবেষণা জড়িপে এসব নদীকে মওসুমী নদী বলা হয়। তাই ৩৪টি পতিত নদীর বিপ্লবের তালিকায় যেসব নদী রয়েছে সেসব নদীগুলো হলোঃ লালমনিরহাটের মরাসতি ও সানিয়াজান, রংপুরের ঘামটাও, আখিড়া, কুড়িগ্রামের ফুলকুমার, দিনাজপুরের চোপা, কাকড়া, পঞ্চগড়ের ছাতাই, পাখরাজ, মহনন্দা, আপার, ঢাকনাই, রামচন্ডি, খোরকা, কুরুম, গোবর, পেটাটিক, ঘোরামারা, করতোয়া, রেরং, ভেরমা, ঠাঁকুরগাঁয়ের কুলিক, নীলফামারীরর চিকলিয়া, মানস ভাইজান, বুড়িখাতা, নাউতারা, ধুম ও বুড়ি তিস্তা। দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপর বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে এ দেশের নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২ শত টি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে এর সংখ্যা ৭১০ টি। এসব নদীতে শুষ্ক মওসুমে সামান্য পানি থাকলেও জোয়ার-ভাটার প্রভাব থাকে না। প্রতি বছর পলি মাটি জমে দিন দিন জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী নদীগুলো। সরকারী-বেসরকারীভাবে এর সার্বিক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষক ও জেলে পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন হতো, সেই সাথে ভারসাম্যহীন থেকে মুক্ত হতো এ অঞ্চল এবং নেমে আসতোনা বিপর্যয়।