আকাশে গর্জন শুনলেই ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে…. পলাশবাড়ীতে শ্রমিক সংকট, কয়েক’শ হেক্টর জমির পাকা ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক…
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হলেও কৃষকদের মুখে হতাশার ছাপ। কৃষি শ্রমিকের দাম দ্বিগুন ও সময়মত কৃষি শ্রমিক না পাওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হতাশার ছাপ লক্ষ করা গেছে। এছাড়াও দীর্ঘ খড়ার পর ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী ঝড় ও শীলা বৃষ্টি- এমনটাই অভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ধান ক্ষেতে এখন সোনালী শীষ আর মৃদু বাতাসে দুলছে পাকা ধান। ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক না থাকায় প্রায় কয়েক’শ হেক্টর জমির ধান ঘরে উঠানো নিয়ে বেশ ভয়ের মধ্যে আছেন কৃষকরা। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি কিংবা কাল বৈশাখী শুরু হলে ধানের যে পরিমান ক্ষতি হবে তা বলা বাহুল্য।
পলাশবাড়ী পৌর শহরের কৃষি শ্রমিক হারেজ আলী বলেন- আমি আগে ধান কাটাসহ বিভিন্ন কাজ করতাম। বর্তমানে অটোরিকশা চালাই। ধান কাটার কাজে অনেক কষ্ট। অটোরিকশা চালানো সহজ। এ ছাড়া আয়ও বেশি।
সুলতানপুর বাড়াইপাড়া গ্রামের কৃষক আযম বলেন, আকাশের গর্জন শুনলেই ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে, এই বুঝি শিলাবৃষ্টি শুরু হবে। জমিতে পাকা ধান অথচ কৃষি শ্রমিক সংকটের কারনে ধান কাটতে পারছি না।
হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে কেন ধান কাটছেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ধানকাটা মেশিন কম।’ তিনি আরো বলেন- আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবং সময় মত কৃষি শ্রমিক পাওয়া গেলে আশা করা যাচ্ছে দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই সব বোরো ধান কাটা ও মাড়াই করে সুষ্ঠুভাবে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের আন্দুয়া গ্রামের কোরবান আলী বলেন- কৃষি শ্রমিক না থাকায় নিজের ধান বউ- বাচ্চা নিয়ে নিজেই কর্তন করছি। ৩৩ শতক জমির ধান কর্তনে ৪ হাজার টাকা, মাড়াইসহ ৫/৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। শুধু ভয় একটাই খড়ার পর অতিরিক্ত শিলা বৃষ্টি হলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবো। কৃষকের কথা কেউ ভাবে না। সরকারের হারভেস্টার মেশিন কোন কাজে আসছে না।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন বলেন- কৃষি শ্রমিকের বিকল্প কমমাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা। কিন্তু সব কৃষক একই জাতের ধান না লাগানোর ফলে এই মেশিন তেমন কোন কাজে আসছে না।
পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেমা কায়সার মিশু বলেন- শ্রমিক সংকটের বিষয়টি শুনেছি। কৃষি বিভাগ উপজেলায় ইতোমধ্যে ১০ টি হারভেস্টার মেশিন বিতরন করেছে। ২/৪ দিনের মধ্যে আরো কয়েকটি মেশিন বিতরন করা হবে। কৃষকরা চাইলে হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কেটে নিতে পারবে।
সমলয় প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ক্ষেতের ধান কেটে দেওয়ার কথা থাকলে ও হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষি অফিসার বলেন কোন কৃষক ধান কেটে না নিলে আমাদের কি করার আছে? এক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সচেতনতার অভাব হতে পারে।