মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

সংসদে আজ অর্থবিল কাল বাজেট পাস

সংসদে আজ অর্থবিল কাল বাজেট পাস

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় সংসদে আজ শনিবার অর্থবিল ও কাল রবিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হচ্ছে। এই বাজেট পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের নতুন অর্থবছর। ধারাবাহিকভাবে টানা চারবারের মতো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় বাজেট বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতেও বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে সাধারণ মানুষের। এ অবস্থায় নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আগামীকাল রবিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে এবং ১ জুলাই সোমবার থেকে নততুন বাজেট কার্যকর হবে। নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ থাকবে। বাজেট পাসের দিন এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরতে পারেন। এবারের বাজেটে কর, ভ্যাট ও শুল্কজনিত বিষয়ে বেশকিছু পরিবর্তন এনে অর্থবিল ২০২৪ পাস হবে সংসদে। তবে সেই অর্থে বাজেটে ব্যাপক কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। এর আগে গত সংসদে গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন। সেখান থেকে দু-একটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো বড় সংশোধনীর সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। এতে আয়কর ও কাস্টমস সংক্রান্ত সামান্য কিছু পরিবর্তন আসছে। এছাড়া কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি শর্ত সাপেক্ষে ইকোনমিক জোন ও হাইটেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে আগের মতোই জিরো ডিউটি সুবিধা বহাল থাকতে পারে। অন্যদিকে, নানান সমালোচনার পরও কালো টাকা সাদা করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে না সরকার।

এসব নিয়েই আজ শনিবার (২৯ জুন) পাস হতে পারে অর্থবিল। জাতীয় সংসদে আগামীকাল, রোববার পাস হবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। পরদিন, ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ছোটখাটো দু-একটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো বড় সংশোধনীর সম্ভাবনা নেই।

প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপের আহ্বান জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবু হাসান মাহমুদ আলী। তবে শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর নাও হতে পারে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনি জটিলতায় এ পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে পারে সরকার। কেননা সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে বিদ্যমান আদেশ সংশোধনের কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। ফলে আগের মতো এবারও এমপিরা শুল্কমুক্ত কর সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

এনবিআর সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পরে মঙ্গলবার (২৬ জুন) বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যায়ক্রমে কর অব্যাহতি কমিয়ে কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। পাশাপাশি আর্থিক খাত সংস্কারের পরামর্শ ও দিয়েছে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, আইন প্রণেতাদের গাড়ি আমদানিতে থাকা কর অব্যাহতি তুলে নেওয়ার মাধ্যমে এ কার্যক্রম জোরদার করতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে সংসদ সদস্যদের এ সুবিধা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার প্রস্তাবটি সংসদে পাস না হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের আগে আইন প্রণেতাদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় প্রত্যাখ্যান করেছিল।

গত ৬ জুন বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক-কর অব্যাহতি আছে। সব স্তরে অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সবাইকে রাজস্ব দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য শুল্ক-কর ছাড়া গাড়ি আমদানির নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন একটি মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এই উদ্দেশ্যে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অব্যাহতির সুবিধা পরিবর্তন করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে সংসদ সদস্যদের (পারিশ্রমিক ও ভাতা) আদেশ ১৯৭৩-এ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি বাতিল করতে হলে ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার সংশোধন করতে হবে। তাহলে এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে কর আরোপ করা যাবে। এনবিআর সংবিধিবদ্ধ রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) জারির মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান কোনো আইনকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।

জানা গেছে, কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি কিছু শর্ত সাপেক্ষে ইকোনমিক জোন ও হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে আগের মতই জিরো ডিউটি সুবিধা বহাল থাকতে পারে। এছাড়া শেয়ারবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের উপর নতুন করে আরোপ করা ট্যাক্স অব্যাহত থাকতে পারে।

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে এবার অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর অবকাশ সুবিধা বহার রাখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। দেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। এমন অবস্থায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর আরোপ করা হলে বিনিয়োগ কমে আরও শোচনীয় পর্যায়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে হাই-টেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে কর অবকাশ অব্যাহত রাখা হতে পারে। ২০২৪-২৫ এর প্রস্তাবিত বাজেটে এই অঞ্চলগুলোর মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছিল। তবে তা আগের মতো ০ শতাংশ হতে পারে।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আপত্তি থাকলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সংশোধনী বাজেটে আগের মতোই ৫০ লাখ টাকা লাভের ওপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদের প্রবল সমালোচনার মুখেও কালো টাকা সাদা করার বিধান থেকে সরছে না সরকার। এ সুযোগ বহাল থাকলে আগামী ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই ছাড়াই কালো টাকা সাদা করতে পারবেন। সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন করতে পারবে না।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন