টানা বৃষ্টিরপাত উজানের পাহাড়ী ঢল পানি বেড়েছে, ভাঙন আতঙ্ক
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ
টানা তিনদিন দিন-রাত থেমে থেমে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে গাইবান্ধায়। সেইসাথে যোগ হয়েছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল। ফলে গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে তিস্তা নদীর পানি কমেছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ১৯ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর ১২টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার, শহরের ঘাঘট নদীর পানি নিউব্রিজ পয়েন্টে ৬৮ সেন্টিমিটার, করতোয়া নদীর পানি চকরহিমাপুর পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাহাড়ি ঢলে তিস্তাবেষ্টিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, কাপাসিয়া, হরিপুর ও বেলকা এই ৪টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে। সেইসাথে নদীর তীব্র স্রোতে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনজু মিয়া মুঠোফোনে জানান, এ পর্যন্ত ২২০ বাড়ি নদী গর্ভে বিলীণ হয়েছে। যেভাবে আবারও পানি বাড়ছে তাতে মনে হয় ঘরবাড়ি তলিয়ে যাবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭৫ হাজার টাকা নগদ দেওয়া হয়েছে। কোন খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রশাসন থেকে এখনো ঘর করার ঢেউটিন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। যাদের ঘর নদীতে ভেঙে গেছে, তারা খুব কষ্টে আছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মণ্ডল জানান, চার ইউনিয়নের বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য নগদ ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে এছাড়া খাবার ৫০ ব্যাক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢেউটিনের জন্য বরাদ্দ চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই সেইসব পরিবারের মাঝে দেওয়া হবে ঢেউটিন বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এদিকে গাইবান্ধার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর, গিদারি, ঘাগোয়া ও ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, এরেন্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি ও ফজলুপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীগুলোতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়ন ও গজারিয়া ইউনিয়নের কিছু স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান খুশি বলেন, আমার ইউনিয়নের নদী এলাকার ১৫টি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। ঢেউটিন এবং অন্যান্য সহযোগিতার জন্য তালিকা করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদ আল হাসান বলেন, সদর উপজেলার নদী বেষ্টিত চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ স্বেচ্ছাসেবীদের সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখার জন্য বলা হয়েছে। ওই সব এলাকায় শুকনা খাবারসহ মেডিক্যাল টিমের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, আগামী কয়েকদিন পানি আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। নদী ভাঙন রোধ একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার ব্যাপার। তারপরও ভাঙন রোধে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।