লুইস বন্ধুত্বের টানে তাইওয়ান থেকে পার্বতীপুরে


পার্বতীপুর(দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
সাধারণত প্রেমের টানে বহি:বিশে^র বিভিন্ন স্থান থেকে ছেলের জন্য মেয়ে কিংবা মেয়ের জন্য ছেলেদের দেশ বিদেশে গমন সচারচার দেখা মিললেও এবারে ঘটেছে ব্যতিক্রমী এক ঘটনা। ৩ হাজার কিলোমিটার পারি দিয়ে বন্ধুর সাথে দেখা করতে বাংলাদেশে এসেছেন এক যুবক। ভিনদেশী যুবককে এক নজর তাকে দেখতে ভীড় করছেন স্থানীয়রা। ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায়।
জানা গেছে, উপজেলার পৌর শহরের রোস্তমনগর মহল্লার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের ছেলে আপন ইসলাম (১৮)। এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী আপন ইসলামের সাথে বছর দেড় বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় লুইস সিংজন ইয়ের নামের এক বিদেশী নাগরিকের। তিনি তাইওয়ানের খি লং শহরের বাসিন্দা ইয়ে লং হুয় এর ছেলে। পরিচয়ের পর থেকেই যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক দিন দিন আরও গভীর হয়। এক মাস আগে হঠাৎ লুইস বাংলাদেশে আশার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে আমন্ত্রন জানান আপন ইসলাম। বন্ধুর আমন্ত্রনে ৩ হাজার ১০৮ কিলোমিটার আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় আসেন লুইস। স্থানীয় ছাড়াও পারিবারের সদস্যরা তাকে সাদরে বরণ করে নেন। তার আগমনে খুশির স্থানীয়রাও। ছেলের বন্ধু লুইসকে নিজের সন্তানের মতো পরম মমতায় বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন আপনের বাবা মা। বিদেশী লুইসকে দেখতে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ভীড় করছেন স্থানীয় ছাড়াও বহিরাগতরা। তবে মানুষের এ আগমনকে আনন্দের কারণ হিসেবে দেখছেন পরিবারের সদস্যরা। তাই ভিনদেশী মেহমানকে তার প্রিয় খাবার রান্না করে খাওয়ানোর মাধ্যমে সন্তুষ্ট করার পাশাপাশি দেশের কৃষ্টি কালচার তুলে ধরার কথা জানিয়েছেন আপনের পরিবার। প্রথম বারের মতো পার্বতীপুর উপজেলায় ভিনদেশী নাগরিকের আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়লে দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেন নানা শ্রেণির পেশার মানুষ। ভিন দেশীর মুখে আধো আধো বাংলা শুনে আনন্দিত তারা। লুইসকে কাছে পেয়ে আগতদের মধ্য থেকে অনেকেই গল্প আড্ডায় মজেন তার সাথে। আবার বিশেষ মূহুর্তকে স্মৃতি হিসেবে স্মরণ রাখতে মুঠোফোনে ছবি তুলতে অনেককে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। তবে, এতসব কর্মযোগ্যকে আনন্দের খোরাক হিসেবে নিচ্ছেন লুইস।
বিদেশী নাগরিক লুইসের বন্ধু আপন ইসলাম বলেন, ফেসবুকের ফুটবল খেলার ভিডিও পোষ্ট করেন তিনি। সেখানে একটি কমেন্ট থেকে তাদের পরিচয় হয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি মূলত একজন ফুটবল খেলোয়াড় আপন। পরিচয়ের পর থেকে তাদের বন্ধুত্বের বন্ধন আরও সু দৃঢ় হয়। সর্বশেষ বন্ধুত্বের টানে আমার সাথে দেখা করতে আসে। তার আগমনে আমি উচ্ছাসিত।
লুইসের মাতৃভাষা চাইনিজ। তাই মনের ভাব প্রকাশে লুইস ব্যবহার করছেন সেই ভাষা। তবে, স্থানীয়দের সুবিধার্থে বন্ধু আপন তা বুঝিয়ে দিতে দেখা যায়।
আপনের মা মিনু বেগম জানান, ছেলের বন্ধু লুইস আমারও সন্তানের মত। সে আসার পর থেকে তার প্রিয় বিভিন্ন খাবার তৈরী করে দিয়েছি। রং চা এর পাশাপাশি নুডুলস খেতে পছন্দ করে লুইস।
আপনের বাবা নজরুল ইসলাম, আমার ছেলের সাথে দেখা করতে আসার লুইস একজন ভ্রমন প্রিয় মানুষ। আসার পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আসছে। তারাও অনেক আনন্দ পাচ্ছে।
তাইওয়ানের নাগরিক লুইস সিংজন ইয়ে বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর চেষ্টা করেন। তার মুখে আধো আধো বাংলা ভাষা শুনে আনন্দিত স্থানীয়রাও।
আপনের মামা রেজাউল শেখ শুভ বলেন, বন্ধুত্বের টানে বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকে আসে শুনেছি। তবে, এবার পার্বতীপুরে প্রথমবারের মতো এ ঘটনার স্বাক্ষি হলাম। আমরা খুব আনন্দিত।
লুইসের আগমনের খবর শুনে তাকে দেখতে আসা মামুনসহ অনেকে জানান, আমরা তার ভাষা বুঝতে পারছি না। তবে, সে কয়েকটি বাংলা ভাষা রপ্ত করেছে। যার জন্য আমরা কিছু কিছু বুঝতে পারি। তবে, আপন তা ট্রান্সলেট করে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতি লুইসের ভালোবাসায় মুগ্ধ আমরা। বন্ধুত্বের সম্পর্কের কাছে দূরত্ব কখনো বাঁধা হতে পারেনা লুইস তারই উদাহরণ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা আরও বলেন, সুন্দর পৃথিবীর বর্তমান সমাজে স্বার্থের কিংবা ভূলবুঝাবুঝি কারণে ভেঙ্গে না যাক আর কোন সম্পর্ক, লুইস-আপনের বন্ধুত্বের মতোই সুন্দর হোক প্রতিটি সম্পর্ক এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।