শুক্রবার, ৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

বদলে যাচ্ছে চাকরির বাজার, কমেছে নতুন নিয়োগ

বদলে যাচ্ছে চাকরির বাজার, কমেছে নতুন নিয়োগ

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : প্রযুক্তি খাতে সদ্য স্নাতকদের জন্য চাকরির পথ আগের তুলনায় অনেকটাই কঠিন হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নবীন পেশাজীবীদের (ফ্রেশার) নিয়োগের হার গত পাঁচ বছরে ৫০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নাটকীয় পরিবর্তনের পেছনে প্রধান কারণ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর দ্রুত অগ্রগতি। এর ফলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মপ্রবাহ ও মানবসম্পদের চাহিদায় আমূল পরিবর্তন এসেছে।

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান সিগন্যাল ফায়ার-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালের পর থেকে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এন্ট্রি-লেভেল পজিশনে নিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে ৫০% এরও বেশি। এক সময় এসব কোম্পানিতে নবীনদের নিয়োগহার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ, যা এখন কমে মাত্র ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে—এমনটাই জানিয়েছে টেকক্রাঞ্চ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন কোনো সাময়িক অর্থনৈতিক মন্দার ফল নয়, বরং এটি AI-চালিত একটি দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তরের অংশ। অনেক জুনিয়র লেভেলের কাজ এখন সহজেই AI দিয়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে, ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আর অতটা নতুন কর্মী নিচ্ছে না।

লিংকডইনের সিনিয়র কর্মকর্তা অনিশ রামান বলেন, “যেসব কাজ একসময় নবীনরা করতেন, এখন সেগুলোর বড় অংশই AI করতে পারছে। ফলে নতুনদের জন্য প্রবেশদ্বার অনেকটাই সংকুচিত হয়ে গেছে।”

মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি মন্তব্য করেন, “আমাদের কোম্পানিতে AI এখন একজন মিড-লেভেল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মতো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারছে। আগামী এক বছরের মধ্যেই AI বড় প্রকল্পগুলোর কোডিং প্রায় একাই সম্পন্ন করতে পারবে।”

গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই জানিয়েছেন, তাদের নতুন কোডের ৩০ শতাংশের বেশি এখন AI দিয়ে লেখা হচ্ছে। অন্যদিকে মাইক্রোসফট প্রধান সত্য নাদেলা বলেন, তাদের বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার প্রকল্প এখন পুরোপুরি AI দ্বারা চালিত।

তবে প্রযুক্তি খাতে চাকরির সংখ্যা একেবারে কমে যাচ্ছে না। চলতি বছর এ খাতে প্রায় ৬০ লাখ কর্মসংস্থান রয়েছে, এবং ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৭০ লাখে পৌঁছাবে। তবে পরিবর্তন এসেছে চাকরির ধরনে—শুধু সাধারণ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট জ্ঞান এখন আর যথেষ্ট নয়। বরং AI-সংক্রান্ত দক্ষতা এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৮৭ শতাংশ কোম্পানি এখন AI-সম্পর্কিত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী খুঁজছে। এমনকি চারটি চাকরির বিজ্ঞাপনের মধ্যে অন্তত একটি বিজ্ঞাপনে AI স্কিল বাধ্যতামূলক হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

চাকরির বাজারে AI-এর প্রভাব এখন স্পষ্ট। আগের মতো শুধুমাত্র একটি স্নাতক ডিগ্রি ও সাধারণ কোডিং দক্ষতা দিয়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এখনকার বাজারে যারা মেশিন লার্নিং, প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা অ্যানালাইসিস এবং AI টুল ব্যবহারে দক্ষ, তারাই এগিয়ে থাকবে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানে।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন