কলাপাড়ায় সাংবাদিক ও যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল কুয়াকাটা।।


কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বাংলাভিশনের কুয়াকাটা প্রতিনিধি ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিরন কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে বাম হাত অর্ধেক কর্তন ও ডান হাতের রগ কেটে এবং এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে দূর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর এ ঘটনায় শঙ্কাজনক অবস্থায় মিরনকে প্রথমে কুয়াকাটা, কলাপাড়া ও বরিশাল মেডিকেলে চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি ঘটলে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় তাকে ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা। বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী ও সংবাদ কর্মী ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করলেও পুলিশ ঘটনায় জড়িত কাউকে চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে মহিপুর থানা পুলিশ বলেন, তারা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছেন।
মঙ্গলবার রাত ১২টার পর মাইক্রোবাসে করে যুবদলের ও ছাত্রদলের দুই কর্মীর সাথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসে সাংবাদিক মিরন। তাকে তারা কুয়াকাটা সংলগ্ন তুলাতলীর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে অন্য সহযাত্রীরা চলে যায়। এসময় পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা সশস্ত্র দূর্বৃত্তরা তার বাসার সামনে ফেলে কুপিয়ে বাম হাত কনুইয়ের কাছ থেকে কেটে চামড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখে। ডাম হাতের রগ কেটে দিয়ে পেটে চাকু ঢুকিয়ে দেয়। গলা বরাবর কাটার চেষ্টা করে। এসময় তার ডাক চিৎকারে পরিবারের লোকজন দরজা খুলে বের হলে মিরনকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা।
লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমাদুল হাওলাদার জানান, তারা রাত ১২ টার দিকে মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসেন। মিরনকে বাসার সামনে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়ার কয়েক মিনিট পরই তার নম্বরে মিরনের নাম্বার থেকে একটি মিসকল আসে। এরপর তাকে কল ব্যাক করলে মোবাইল টি বন্ধ পাই। এরপর দ্রুত এসে দেখি সে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
মিরনের স্বজনরা জানান, তারা ডাক চিৎকার শুনে ঘরের বাইরে এসে দেখি মিরনের হাত কাটা। রক্তের স্রোত নেমেছে চারিদিকে। এ অবস্থা দেখে ডাক চিৎকার করলে আশেপাশের মানুষ আসে। তাদের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জহিরুল ইসলাম মিরন কুয়াকাটা পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। এছাড়া তার আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে । পাশাপাশি টোয়াক’র সদস্য। তবে কারা কি কারণে মিরনের উপর এ নৃশংস বর্বরতা চালিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না তার পরিবার রাজনৈতিক সহকর্মী ও সংবাদকর্মীরা।
এদিকে সাংবাদিক ও কলেজ শিক্ষক মিরনের উপর নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে দুপুর ১২ টায় কুয়াকাটা বিভিন্ন সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল এবং কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ। এতে যোগ দেয় বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বলেন অবিলম্বে সাংবাদিক মিলনের উপর হামলাকারীকে গ্রেফতার করা না হলে গোটা কুয়াকাটা জুড়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কুয়াকাটা প্রেসক্লাব সভাপতি রুমানা ইমতিয়াজ তুষার বলেন, সাংবাদিক মিরনের উপর হামলা কারীদের গ্রেফতারের দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে হামলাকারী সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হলে কুয়াকাটাবাসীকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কলাপাড়ার কুয়াকাটা হাসপাতালের সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াজ বলেন, মিরনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কুয়াকাটা থেকে রেফার করা হয়েছে। তার বাম হাত ধারালো অস্ত্রের কোপে কনুইয়ের নিচ থেকে ঝুলে পড়ে। ডান হাতের কব্জির রোগ কাটা হয়। এছাড়া মাথা ও গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে।
এ বিষয়ে কলাপাড়ার মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, তারা ঘটনাস্থল ও আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িতদের সনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন। খুব দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানান। তবে এখন পর্যন্ত থানায় মামলা দায়ের হয়নি।