দুই হাত না থাকা সেই তামান্নার ‘ইচ্ছার আলো’
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : জন্ম থেকেই দুই হাত ও ডান পা নেই তামান্না আক্তার নুরার। একটি পা-ই তার সম্বল। পা দিয়ে লিখেই তিনি পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ-৫। পেয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ। তিনি এখন ইংরেজি বিভাগে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। এবার তার নিজের লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। জীবন সংগ্রামের অধ্যায়ে নিজেকে এবার উপস্থাপন করলেন লেখক হিসেবে। হাজারো প্রতিকূলতায় ‘ইচ্ছার আলো’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন তামান্না। কোনো প্রতিবন্ধকতা স্বপ্ন আটকাতে পারে না তেমনই অনুপ্রেরণা দিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তামান্না লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমার প্রথম লেখা বই ‘ইচ্ছার আলো’ প্রকাশিত হয়েছে। এই বইটি লেখা ছিল আমার একটি স্বপ্ন। শারীরিক অক্ষমতা কখনো স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না, এটি আমি পাঠকদের মনেপ্রাণে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। অবশেষে আমার সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে মা-বাবা, শিক্ষক-সহপাঠী এবং গণমাধ্যম অনেক অবদান রেখেছে। আজকের এই স্বপ্নপূরণে আমি তাদের আরও একবার ধন্যবাদ জানাই। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে বাড়ি তামান্নার। বাবা রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন দম্পতির বড় সন্তান তামান্না। তামান্নার জীবনযুদ্ধের অন্যতম নায়ক তার মা খাদিজা। তামান্নার বইয়ে দেশে হাজারো তামান্নাকে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। মা-বাবা সচেতন ও সাপোর্টিভ হলে জীবনটা আরও সুন্দর হতে পারে। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করলে সবকিছুই সম্ভব। শরীরের অপূর্ণতার জন্য কোনো কিছু আটকে থাকতে পারে না। এমনই সব অনুপ্রেরণার কথা প্রকাশ করা হয়েছে বইটিতে। বইটিতে তামান্নার জীবনযুদ্ধের নানাদিক তুলে ধরে হাজারো তামান্নার জীবনকে পরিবর্তন করারই মূল উদ্দেশ্য। তামান্না জানান, এই পথ চলায় শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন আমার বাবা। পাঠকদের মাধ্যমে আমার স্বপ্নগুলোর মধ্যে একটি স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে। পাঠকগণ বইটি পড়ে উপকৃত হবে বলে আশা তার। তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তামান্না বলেন, বইটির নাম ‘ইচ্ছার আলো’। বইটিতে ফোকাস করেছি ইচ্ছাশক্তিকে। শক্তিকে আমি দুইভাবে তুলনা করেছি। একটা ইচ্ছার আলো দিয়ে যেটা আমরা কামনা করি, আরেকটি হলো মানসিক শক্তি যেটা দিয়ে আমরা সবকিছু চাইলেই করতে পারি। তিনি আরও বলেন, একটি অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে সারা দেশে বইটি ছড়িয়ে দিতে চাই। আর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আমার বইয়ের জন্য জায়গা হয় তাহলে আমার খুব ভালো লাগবে। আমার ক্যাম্পাসে আমার বই পাওয়া যাবে বিষয়টা তো নিঃসন্দেহে ভালো লাগার। এ বিষয়ে তার কলেজের অধ্যক্ষ সামছুর রহমান জানান, তামান্নার জীবনযুদ্ধের গল্প আমরা সবাই জানি। ছাত্রী হিসেবে সে অনেক মেধাবী। সে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। এটি নিয়ে আমরা গর্ব করি। তামান্নার বই প্রকাশিত হয়েছে জেনেও খুশি হয়েছি। সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে এটা আমাদের বিশ্বাস।