এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র গতি মিলেছে জাতীয়-স্থানীয় জীবনে
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ তিস্তার বুকে জেগে থাকা দুর্গম বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে সাড়ে ৬০০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় ও এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দৈনিক উৎপাদিত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের লাটশালা ও চরখোর্দ্দা গ্রামে তিস্তা সোলার লিমিটেড নামে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছে বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড। এর পাশেই রংপুরের পীরগাছা এবং নদীর ওপারে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষে চলতি বছরের গত ২ আগস্ট রংপুর সফরে এসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এতে স্থাপন করা হয়েছে ৮৫টি মাউন্টিং পাইলস। যার ওপরে বসানো হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ ৬০ হাজার সৌর প্যানেল। এসব সৌর প্যানেল থেকে ১২০টি ইনভার্টারের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এজন্য ২৮টি বক্স ট্রান্সমিশনে সংযোগ স্থাপন, সাবস্টেশনসহ ১৩২ কেভিএ ট্রান্সমিশন টাওয়ার নির্মাণ এবং জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তির জন্য তিস্তা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে রংপুর পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে ১২২টি টাওয়ারের ৩৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার লম্বা সঞ্চালন লাইন। এ লাইনের মাধ্যমেই সুন্দরগঞ্জের তিস্তাপাড়ের কেন্দ্রটি থেকে রংপুর গ্রিড সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত দৈনিক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৩ দশমিক ৯৩ টাকা চুক্তি মূল্যে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় স্থানীয়দের জীবন-জীবিকায় এসেছে গতি। এতে এলাকার শতশত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় রৈাকমান ও ডালিম মিয়া বলেন, কয়েকবছর আগে এই এলাকায় আসার মতো কোনো রাস্তা ছিল না। জমিতে ফসল উৎপাদন হতো না। সেই অনাবাদী জমিতে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় এই এলাকায় রাস্তাঘাট হয়েছে। ফলে ফসল উৎপাদন-পরিবহন করা সম্ভব হবে। সর্বোপরি এই এলাকার মানুষজনের জীবন-জীবিকার বহুমুখী পথ উন্মুক্ত হয়েছে।তারা আরও বলেন, এসব এলাকার জমি আগে বিক্রি হতো প্রতি বিঘা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি শতক জমি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মর্জিনা বেগম বলেন, এসব দুর্গম এলাকার মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গার্মেন্টস ও কল-কারখানায় কাজ করে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় এলাকার শতশত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম লেবু জানান, এখানে দেশের সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সৌভাগ্যের দুয়ার খুলেছে। পাশাপাশি এটি তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দ-সৌভাগ্যের।
এ বিষয়ে বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান শায়ান এফ রহমান বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে বেক্সিমকো গ্রুপ। পরিবেশবান্ধব নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তারই অংশ হিসেবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেছে গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড। তিনি আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত ভবিষ্যতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষে ভবিষ্যতে আরও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখবে।