শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

ঐতিহাসিক জগৎপুর গণহত্যা দিবস আজ

ঐতিহাসিক জগৎপুর গণহত্যা দিবস আজ

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : শেরপুরের ঐতিহাসিক জগৎপুর গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামে পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে অন্তত ৪২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। আহত হয় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এতে ২শ’রও বেশি বাড়ি-ঘর পুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও ওই গ্রামে শহিদদের স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিফলক। করা হয়নি শহিদদের নামের তালিকা। এখনো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে শহিদদের গণকবর। জানা যায়, শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে জগৎপুর গ্রামের অবস্থান। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক বাহিনী আর তাদের দেশীয় দোসররা গ্রামটির তিন দিক ঘিরে ফেললে গ্রামের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশের রাঙ্গুনিয়া বিলে। সেদিনের বর্বোরোচিত হামলায় ৪২ জনের প্রাণ গেলেও ভয়াল স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন অনেকেই। সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতিচারণ করে বেঁচে থাকা গ্রামবাসী সোবহান মিয়া, হোসেন আলী, লক্ষণ দাশ ও লক্ষী রানী দেব বলেন, সেদিন ছিল বাংলা ১৬ বৈশাখ ৩০ এপ্রিল শুক্রবার। সকাল ৮টার দিকে জগৎপুরের সামনের শংকরঘোষ গ্রামের স্থানীয় রাজাকার মজিবর, বেলায়েত, নজর ও কালামের সহযোগিতায় পাকবাহিনী জগৎপুর এলাকা তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এ সময় পাক বাহিনীর তিনটি দল গ্রামের তিন দিকে অবস্থান নিয়ে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। ওইসময় গ্রামবাসী কোনো কিছু না বুঝেই জীবন বাঁচাতে গ্রামের পেছনের দিকে রাঙ্গুনিয়া বিলের দিকে দৌঁড়ে পালাতে থাকে। কিন্তু বিলের মাঝখানে পানি থাকায় কেউ সাঁতরে, আবার কেউ বিলের দু’পাড় ঘেঁষে পালিয়ে যায়। ওই সময় শুকনো জায়গা দিয়ে পালাতে গিয়ে পাক সেনাদের গুলিতে শহিদ হন ৪২ জন গ্রামবাসী। গুলি করে গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা। তারা জনমানুষ শূন্য গ্রামের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ঘটনার প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা পর পাক সেনারা চলে গেলে কিছু কিছু গ্রামবাসী ফিরে এসে দেখে তাদের বাড়ি-ঘরে পোড়া ছাঁই ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ওই অবস্থা দেখে অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যায়। আবার অনেকেই নাড়ির টানে গ্রামেই পড়ে থাকে। তারা আরো বলেন, হিন্দু-মুসলিম অনেকেই তাদের আত্মীয়দের লাশ গ্রামের একটি জঙ্গলের কাছে গণকবর দেয়। ওই গণকবরের পাশেই বর্তমানে হিন্দুদের শ্মশান ঘাট রয়েছে। কিন্তু ওই গণকবরের স্থানে আজও কোনো স্মৃতিফলক নির্মাণ হয়নি। জগৎপুরের কৃষক আব্দুস সামাদের ছোট ভাই আলফাজ ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পার্শ্ববর্তী একটি ব্রিজ ভাঙার জন্য গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছলে তার মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে গ্রামে ছুটে যান। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন আরো এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের মাসখানেক আগে স্থানীয় রাজাকাররা তার ভাই ও ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ডেকে নিয়ে গেলেও আজো তাদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ওই এলাকায় গণকবরের কোনো চিহ্নই বুঝার উপায় নেই। স্থানীয় শহিদ পরিবারের স্বজনরা সরকারের কাছে দ্রুত গণকবরটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরু বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর অঞ্চলের গণহত্যার ইতিহাসে জগৎপুর আজো এক দগদগে ক্ষত। জগৎপুর এলাকায় সংঘটিত গণহত্যায় শহিদদের তালিকা পর্যন্ত হয়নি। এখানকার কবরগুলোর চিহ্নও মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তিনি গণকবর সংরক্ষণ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণসহ স্থানীয় রাজাকারদের বিচার দাবি করেছেন।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন