লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ভূট্টা ক্রয়-বিক্রয়ে সিন্ডিকেট ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকেরা
মো: লাভলু শেখ লালমনিরহাট থেকে।।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ভুট্টা ক্রয়-বিক্রয়ে সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ কৃষকেরা । নানা কৌশলে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করছে পাটগ্রাম উপজেলার ভুট্টা ক্রয়ের একাধিক নামিদামি প্রতিষ্ঠান বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা দাবি করছেন, সিন্ডিকেট বা দর নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না, আর্থিক সংকটে ভুট্টা ক্রয়ে ধীরগতিতে হচ্ছে। এছাড়া সারা দেশে ভুট্টার বাজার দর-কম।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ও ১টি পৌরসভায় ভূট্টার ব্যাপক ও বাম্পার ফলন হয়েছে। খেত জুড়ে হলুদ ভূট্টার মোচায় ভরা দানা শোভা ছড়াচ্ছে হুবাহু সোনালী বরণে । প্রত্যাশার এ ফসল ঘরে তুলতে খেতে খামারে ব্যস্ত কৃষকেরা । কিন্তু ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার খবরে কৃষকদের মুখে হতাশার চিহ্ন লক্ষ্য করা গেছে। এই উপজেলায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভূট্টা চাষ লাভজনক ও খরচ কম হওয়ায় গত কয়েক বছরে বেড়েছে ভূট্টার চাষাবাদ। প্রতিবছর এ ফসলের চাষ বেড়েই চলেছে।
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গাফ্ফার জানান, এ উপজেলায় ২১ হাজার ২৬০ হেক্টর চাষযোগ্য আবাদি জমি রয়েছে। গত বছর ১২ হাজার ৬ শ হেক্টর জমিতে ভুট্টা লাগানো হয়েছিল। আগের মৌসুমের চেয়ে ২৬০ হেক্টর জমি বেশি। এ মৌসুমে ১৩ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করা হয়েছে । গত ২ মৌসুমের চেয়ে লক্ষমাএা ছাড়িয়ে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে ভূটা বেশি আবাদ হয়েছে । ভুট্টা থেকে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার তৈরির পাশাপাশি পশুখাদ্যসহ নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয়। আর ডাটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এজন্যও কৃষক ভূট্টা চাষে আরো বেশি আগ্রহে এ আবাদ করেন। এ উপজেলার কৃষকরা ধানের পরপরই ভূট্টাকে চাষাবাদে প্রধান ফসল হিসেবে বেছে নিয়েছে।
পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে বিস্তৃণ এলাকা জুড়ে চাষাবাদ করা ভুট্টা তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি বোরো ধান আবাদ হলেও বেশির ভাগ জমির দখলে ভুট্টার ক্ষেত। শ্রীরামপুর ইউনিয়নের আউলিয়ারহাট এলাকার কৃষক আফাজ উদ্দিন (৫২) জানান,১ দোন (২৫ শতাংশ জমি) বোরো আবাদে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ধান পাওয়া যায় ১২-১৮ মণ (৪০ কেজি প্রতি মণ) বাজারে বিক্রয় হয় প্রতি মণ ৭০০- ৯০০ টাকা। অপরদিকে প্রতি ২৫ শতাংশ বা স্থানীয়ভাবে ১ দোন জমিতে ভুট্টার আবাদে ১০- ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। ভুট্টা পাওয়া যায় ২৫-৩০ মণ। কিন্তু গত বছরের চেয়ে ভুট্টার প্রতি মণে দাম কমেছে ৩ থেকে ৪ শ টাকা। তারপরেও লাভ হবে। তবে, আশাজনক নয়। বর্তমান বাজার দর ৯৪০-৯৮০ টাকা। গত বছর দর ছিল ১২৫০-১৩৫০ টাকা প্রতি মণ।
পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের বেংকান্দা এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ (৫৬) জানান, ‘ভুট্টার বাজার দর কম হওয়ার একমাত্র কারণ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গুলোর যোগসাজস বা সিন্ডিকেট। এতে সাধারণ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমনিতেই উৎপাদন খরচ এ বছরে অনেক বেশি আবার দাম কম।
ভুট্টা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান আস্থা ফিটের হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম উপজেলার ইনচার্জ ইব্রাহিম মিয়া জানান,ভুট্টা ক্রয়ে কোনো প্রকার সিন্ডিকেট আমার জানামতে নাই। কোনো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। ঋণ পরিশোধ করার পর ব্যাংক গুলো থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিটা কোম্পানিতে আর্থিক সংকট রয়েছে। এ কারণে ধীরগতিতে ভুট্টা ক্রয় শুরু হয়েছে।
পাটগ্রাম ভুট্টা ক্রয়কারী মদিনা ট্রেডিং কর্পোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক হাজী হেলাল উদ্দিন জানান, উম্মুক্ত বাজারে সিন্ডিকেট করার কোনো সুযোগ নাই। ভারতেও এবারে ভুট্টার মূল্য কম। নানা কারণে ছাড়াও ডলার সংকটে ফিট মিল, হ্যাচারী, ব্রয়লার ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান জানান, ভুট্টা বিক্রয়ে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে এখনও শুনিনি। কোনো কৃষক অভিযোগ করেনি। সিন্ডিকেটের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।