সূরা কাউসারে মহানবী সা.-কে কোরবানির নির্দেশ
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছেলে কাসেম বা ইবরাহিম শৈশবেই মারা যাওয়ার পর মক্কার কাফেরেরা আল্লাহর রাসূলকে নির্বংশ বলে দোষারোপ করতে লাগলো। তাদের মধ্যে কাফির আস ইবনে ওয়ায়েলের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনও আলোচনা হলে সে বলতো, আরেহ, তার কথা বাদ দাও। সে তো কোনও চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যুর পর তার নাম উচ্চারণের মতো আর কেউ থাকবে না। এর প্রেক্ষিতে সূরা কাউসার নাজিল করেন আল্লাহ তায়ালা। (ইবনে কাসির, মাযহারী) এ সূরায় রাসূল সা.-কে হাউজে কাউসারের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এই সুসংবাদের কৃতজ্ঞতা হিসেবে নামাজ ও কোরবানি আদায় করতে বলা হয়েছে।
রাসূল সা.-এর মুখে হাসি
হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, একদিন মসজিদে উপস্থিত হলেন আল্লাহর রাসূল। হঠাৎ তার মাঝে এক ধরনের ঘুম বা অবচেতন অবস্থা দেখা গেল। তারপর তিনি হাসি মুখে মাথা উঠালেন। তখন আমরা জিগেস করলাম, যে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাসির কারণ কী?
তিনি বললেন, এই মুহুর্তে আমার উপর একটি সূরা নাজিল হয়েছে। এরপর তিনি বিসমিল্লাহসহ সূরা কাউসার পাঠ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে কাউসার নামে জান্নাতে একটি প্রবাহিত নদী দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এতে অসংখ্য কল্যাণ রয়েছে।
কিয়ামতের দিন আমার উম্মত এ থেকে পানি পান করতে যাবে। তাদের সংখ্যা আকাশের তারকারাজির থেকেও বেশি হবে। তবে অমুসলিম, কাফের ও মুরতাদদের হাউজে কাউসারের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেবেন ফেরেশতারা। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী)
মূলত এই সূরায় নবীজিকে নিয়ে কাফেরদের দোষারোপের জবাবে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূলের বংশধর শুধু পৃথিবী নয় বরং তার আধ্যাত্মিক সন্তানদের সম্পর্ক হাশরের ময়দানেও অনুভূত হবে। সেখানে তারা সংখ্যায় অন্য সব নবীর উম্মতের থেকে বেশি হবে এবং তাদের সম্মান, আপ্যায়নও সব থেকে বেশি হবে।
কৃতজ্ঞতা হিসেবে নামাজ ও কোরবানির আদেশ
কাফেরদের মিথ্যা ধারণার বিপরীতে হাউজে কাউসারের সুসংবাদ দেওয়ার পর এই সূরার দ্বিতীয় আয়াতে নবীজিকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দুটি বিষয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তাহলো- নামাজ ও কোরবানি করা।
নামাজ শারীরিক ইবাদতগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ইবাদত এবং কোরবানি আর্থিক ইবাদতগুলোর মধ্যে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য ও গুরুত্বের অধিকারী। এছাড়া আল্লাহর নামে কোরবানি করা প্রতিমা পূজারিদের রীতিনীতির বিরুদ্ধে একটি জিহাদও বটে।
সূরা কাউসারের আরবি উচ্চারণ :
اِنَّاۤ اَعۡطَيۡنٰكَ الۡكَوۡثَرَؕ ١ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانۡحَرۡ ؕ ٢ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الۡاَبۡتَرُ
সূরা কাউসারের বাংলা উচ্চারণ :
ইন্নাআ‘তাইনা-কাল কাওছার। ফাসালিল লিরাব্বিকা ওয়ানহার। ইন্না শা-নিআকা হুওয়াল আবতার।
সূরা কাউসারের অর্থ :
নিশ্চয় আমি আপনাকে আল-কাউসার দান করেছি। কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং কুরবানী কর। (তোমার নাম-চিহ্ন কোন দিন মুছবে না, বরং) তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরাই নির্বংশ।
(তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৮৭৪-৮৭৮)