মঙ্গলবার, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

সংবাদ শিরোনামঃ

ফুলবাড়ীতে বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া গাছের চারা উৎপাদন করলেন কৃষক রমনী কান্ত

ফুলবাড়ীতে বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া গাছের চারা উৎপাদন করলেন কৃষক রমনী কান্ত
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
“দাঁড়াও পথিকবর- আমার নাম কাইজেলিয়া। আমি বিগনোনিয়াসিয়া গোত্রের। আমার বৈজ্ঞানিক নাম কাইজেলিয়া আফ্রিকানা। আমার বাস আফ্রিকায় হলেও এই কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে কতিপয় বৃক্ষ প্রেমিক আমাকে আনুমানিক ১৯২০ সালের দিকে এখানে রোপন করেছিলেন। কারমাইকেল কলেজ ছাড়া বাংলাদেশের কোথাও আমাকে দেখতে পাবেনা। আমার উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ মিটার। ফুল হয় মেরুন অথবা কালচে লাল রং এর। ফল হয় লম্বাটে ও গোলাকার। একেকটি ফলের ওজন হয় ৫ থেকে ১০ কেজি। আমার ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের, পাকলে বাদামি। এই ফল বিষাক্ত তবে অত্যন্ত রোচক। এটি প্রক্রিয়াজাত করে আলসার, সিফিলিস,সর্পদংশনের ঔষধ, বাত, ছত্রাক দমন, চর্মরোগ মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী এমনকি ক্যানসার রোগের চিকিৎসাতেও বহুল ব্যবহৃত হয়। এশিয়াতে আমি এখন লুপ্ত প্রায়। যদি তোমরা সঠিক পরিচর্যা না কর তাহলে অচিরেই আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো। আমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব তোমারদেরই।”
বিরল প্রজাতির এই কাইজেলিয়া গাছটির সাথে দেশের মানুষের পরিচয় রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাধ্যমে। ঐতিহ্যবাহী এ কলেজের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে একটু এগুতেই চোখে পড়বে বিশাল আকৃতির এ আফ্রিকান গাছটি এবং গাছের নিচে লেখা উপরোক্ত কথা গুলো।
কাইজেলিয়ার টিকে থাকার এই আকুতি নাড়া দেয় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের সেনের খামার গ্রামের কৃষক রমনী কান্ত রায়কে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তিনি ১৫ টি কাইজেলিয়া গাছের চারা উৎপাদন করেন।
রমণী কান্ত জানান, জীবন জীবিকার তাগিদে তিনি হরিপ্রিয়া নামে একটি নার্সারি গড়ে তুলি। নার্সারিতে বীজ ও চারার যোগান দিতে আমাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে হয়। একটা সময় আমি রংপুর কারমাইকেল কলেজের বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া গাছ সম্বন্ধে জানতে পারি। সেই থেকে কাইজেলিয়া গাছের চারা উৎপাদনের নেশা আমাকে পেয়ে বসে। দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর গত বছরের শেষের দিকে রংপুর থেকে দুটি কাইজেলিয়া গাছের ফল সংগ্রহ করি। এরপর লেগে পড়ি ফলের বীজ থেকে চারা উৎপাদনের কাজে। সনাতনী পদ্ধতিতে বীজ বপনের পর ১৫ টি চারা গজায়। বর্তমান নয় মাস বয়সে কোন কোনটি চারাগাছ লম্বায় ৫ ফিট হয়েছে। বেশিরভাগ চারাই বর্তমানে রোপনের উপযুক্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে চারাগুলো কিনতে। কিন্তু আমি বিক্রি করি না। কারণ আমি মনে করি, গাছের চারা গুলো ব্যক্তিগত ভাবে সংরক্ষণ বা প্রতিপালন  সম্ভব নয়। তাই বিরল প্রজাতির কাইজেলিয়া গাছের চারা গুলো সংরক্ষণ ও প্রতিপালনের জন্য সরকারি উদ্যোগই আমার কাম্য।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, গত কয়েকদিন আগে উপজেলা পরিষদ চত্বরে কৃষি মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে কাইজেলিয়া গাছের চারা গুলো দেখে আমি অবাক হয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে গাছের চারা গুলো সংরক্ষণ ও পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হবে।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন