১০-১৫ দিন পর বিদ্যুতের কষ্ট থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী ১-২ দিনের মধ্যে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এরপর ১০-১৫ দিনের মধ্যে আরও বিদ্যুৎ যোগ হবে। তাহলে আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দুর্ভাগ্য যে অস্বাভাবিক গরম পড়েছে। বাংলাদেশে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা হবে, তা আমরা ভাবতে পারি না। আর বৃষ্টি নেই। সেখানেও আরেকটা কষ্ট। এ কষ্টটা সবার হচ্ছে। তা আমরা জানি। তারপরও আমরা বারবার বসে এ কষ্টটা লাঘব করার চেষ্টা করছি।’
গতকাল বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতা করলে আমেরিকা ভিসা দেবে না, দেশটির নতুন এ ভিসানীতির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আন্দোলন করবে, সংগ্রাম করবে। আর আমাদেরকে উৎখাত করবে। একদিকে ভালো হয়েছে, সেটা হলো এখন যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ খুন করে তাহলে আমেরিকার ভিসা পাবে না। যাদের কথায় নাচে তারাই খাবে। আমাদের কিছু করা লাগবে না। ওইটা নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নাই।’
বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘তারা কিছু লোক জোগাড় করবে, বসে থাকবে, আন্দোলন করবে। আমি বলে দিয়েছি যত আন্দোলন করতে চাইবে করুক। আমরা কিছু করবো না।’
২০১৩, ১৪, ১৫ সালের মতো দলটি যেন আগুনসন্ত্রাস করতে না পারে সে দিকে নজর রাখার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজের চোখ, ক্যামেরা সবসময় ঠিক রাখতে হবে। কারণ ওদের আবার ওই দোষ আছে তো। একটা উসকানি দিয়ে তারপর ছবি উঠিয়ে ওই বাইরের কাছে কাঁদতে থাকবে।’
বিএনপি জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বাস করে কোথাও থেকে এসে নাগরদোলা চাপিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কেউ দেবে না, ব্যবহার করে। ব্যবহার করবে, কিন্তু ক্ষমতা দেবে না, এটা হলো বাস্তবতা, বাস্তব কথা। ক্ষমতা একমাত্র জনগণই দিতে পারে। জনগণের সেই অধিকার, সচেতনতা আমরাই দিতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটের অধিকারের কথা বলে। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিল। কত ভোট পড়েছিল? ২, ৩ শতাংশ ভোট পড়ে নাই। কিন্তু ঘোষণা দেয়া হলো সব ভোট নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার নিয়ে এখন সচেতন। সেই সচেতনতা আমরা সৃষ্টি করেছি। বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার কেউ যদি কেড়ে নেয়, মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় না। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করেছিল বলেই এই দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল, আন্দোলন করেছিল। এর ফলে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। এই কথাটা সবার মনে রাখা উচিত।’
জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কোনোদিন পরাজিত হয়নি
২০০১ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল মন্তব্য করে দলটির সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে সবসময় জয়ী হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কোনোদিন পরাজিত হয়নি। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোটেই এসেছে। তার বাইরে কখনো ক্ষমতা দখল করেনি। আজকে তারা বলে ভোটারবিহীন। কে ভোটারবিহীন? ভোটারবিহীন তো ছিল খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান। ভোটারবিহীন ছিল এরশাদ। এটা তারা ভুলে গেছে?’
২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যে নির্বাচন (২০০৭ সালে ভোটগ্রহণের আগে বাতিল হওয়া নির্বাচন) ঘোষণা দিয়েছিল সেখানেও তাদের অনেককেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ ওই ভোট চুরি করা মানে নাই। আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, খালেদা জিয়ার পতন ঘটেছে। কাজেই দুই দুইবার ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়ার পতন ঘটেছে।’
বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে মনে হাসি পায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা আবার গণতন্ত্রের কথা কয়। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করেছে আওয়ামী লীগ। শুধু গণতন্ত্র না, জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষা করেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে এসেছে।’
বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা এসেছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জরুরি অবস্থা এসে ভোটার তালিকা সংশোধন করেছে এটা ঠিক। আমাদের দাবিই ছিল এটা। স্বচ্ছ ব্যালট বক্স। এটাও আমাদের দাবি ছিল। নির্বাচন কমিশন যেন নিরপেক্ষ হয় এর জন্য আমরা আইন করে দিয়েছি। তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত হচ্ছে, আমরা সরকার করছি না। তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও আমরা দিয়েছি। যাতে জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। এই দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যাতে থাকে তার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগই করেছে। হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে আমরা সংবিধান সংশোধন করে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পারলেও দুর্ভাগ্য একদিকে করোনা ভাইরাসের তিনটা বছরে সবকিছুর চলাচল বন্ধ। অর্থনীতি স্থবির। উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। এরপর এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় প্রতিটি দ্রব্যের দাম বেড়ে গেল। প্রত্যেকটা দেশে মুদ্রাস্ফীতি।’