বুধবার, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

কুড়িগ্রামে ল্যাম্পি স্কিনে  পাঁচ শতাধিক গরুর মৃত্যু আক্রান্ত কয়েক হাজার 

কুড়িগ্রামে ল্যাম্পি স্কিনে  পাঁচ শতাধিক গরুর মৃত্যু আক্রান্ত কয়েক হাজার 
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ। ইতোমধ্যে এ রোগে মারা গেছে প্রায় পাঁচ শতাধিক গরু। আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার পেরিয়ে গেলেও জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছে নেই কোনো তথ্য। বাজারে নেই প্রতিকারের কোনো ওষুধ। আক্রান্ত গরুর স্যাম্পল পাঠিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
দারিদ্র্যপীড়িত এ জেলার মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন গরু হারিয়ে দিশেহারা হলেও দেখার যেন কেউ নেই। জেলা পরিষদের সদস্য ও রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক জানান, রাজারহাটে এ রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এ উপজেলায় দুই শতাধিক গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে মারা গেছে। এতো গরু আক্রান্ত কিংবা মারা গেলেও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছে কোনো তথ্য নেই। সরকারিভাবে দ্রুত এ রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করা না গেলে বড় লোকসানের মুখে পড়বেন গরু ব্যবসায়ীরা।
একই উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ডাংরারহাট এলাকার গরু ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন  ‘অনেক আশা করি ৭টা বিদেশি গরু কিনি খামার দিছিলং। গত ১৫ দিন আগোত ৯০ হাজার টেকা দামি একটা গরু মরি গেইছে। আরও একটা গরুর সেই রোগ হইছে। বাকিগুলাক নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছোং। এমন হইলে হামরা ফতুর হয়া যামো।’ একই এলাকার জোদ্দার আলী কুরবানি ঈদে বিক্রি করার জন্য একটি গরু লালন-পালন করছিলেন। কিন্তু ঈদের এক সপ্তাহ আগেই ল্যাম্পি স্কিন রোগে গরুটি মারা গেছে। জোদ্দার আলী হতাশ কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে জানান, ‘ধার-দেনা করি খরচপাতি করি গরুটেক সগাই মিলি বড় করছিলং। হঠাৎ রোগ ধরিল। অষুধপাতি দিয়া ডাক্তার ডাকি খুব চেষ্টা করলং। কিন্তু গরুটেক বাঁচপের পাইলং না। মেলা টেকা খরচ হয়া গেইল।’
অপরদিকে চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ কৃষকের গোয়ালের গরুতে ল্যাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। পল্লী চিকিৎসক কিংবা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এখানকার গরু পালনকারীরা। ইউনিয়নের পাত্রখাতা গ্রামের বাসিন্দা গৃহিনী রওশন আরা জানান, ‘ছওয়া-পোয়ার খরচপাতি আর এখনা ভালো করি চলার জন্যে ৭টি গরু লালন-পালন করছিলং। কিন্তু আজগুবি একটা গরুর গায়োত ফোঁসকা ওঠা শুরু হইল। তারপর গা’র গোস্ত খসি পরা শুরু হইল। ডাক্তার-কবিরাজ-গাছনা ওষুধ দিয়াও গরুটেক বাঁচপের পাইলং না। মোর আরও ৩টা গরুর রোগ হইছে। মুই তো চোখোত শর্ষে ফুল দেকপের নাগছং। এই গরুগুলা গেইলে মুই কি করি বাঁচিম।’
বিষয়টি নিয়ে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউপি চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, ‘আমার ইউনিয়নে ব্যাপক হারে গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। এতে অনেকের গরু মারাও যাচ্ছে। ফলে গরিব পরিবারগুলো বেশ লোকসানে পড়ছে। সরকারিভাবে মাইকিং করে লোকজনকে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে জেলায় ল্যাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা থেকে ২৩টি গরুর নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্স ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছি। প্রতিষেধক না পাওয়ায় আক্রান্ত গরুকে অধিক পরিমাণে স্যালাইন, জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ও খাবার সোডা খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এন্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার না করে গরুগুলোকে মশারির ভেতরে রাখার পারামর্শ দিচ্ছি।
আক্রান্ত ও মৃত গরুর তথ্য না থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, যেসব গরু আমাদের প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা নিতে আসে আমরা সেগুলোর হিসাব দিতে পারি কিন্তু বাইরের গরু আমাদের নজরদারিতে থাকে না বিধায় আমাদের কাছে সেগুলোর কোনো তথ্য থাকে না।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন