ডেঙ্গু ‘ডেডিকেটেড’ ডিএনসিসি হাসপাতালের অর্ধেক শয্যাই ফাঁকা
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চাপ সামলাতে গত জুলাই মাসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি অন্যান্য হাসপাতালের মতো এ হাসপাতালেও রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন, চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তিও হচ্ছেন। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা ‘স্থিতিশীল’ হওয়ায় রাজধানীর সরকারি অন্যান্য হাসপাতালগুলোর মতো এ হাপাসপাতালেও রোগীর চাপ অনেকটা কমেছে। যে কারণে ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রায় অর্ধেক শয্যাই এখন ফাঁকা।
বুধবার (৯ আগস্ট) ডিএনসিসি হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম হলেও যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সবরকম প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে আসা রোগীদের সঙ্গেও কথা হয়। রাজধানীর বাড্ডা লিক রোড এলাকা থেকে জ্বর-শরীর ব্যথা নিয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে এসেছিলেন গাড়ি চালক ফয়সাল হোসেন। ডেঙ্গু সংক্রমণ পজিটিভ আসায় ও শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন >> ডেঙ্গু : সর্বনিম্ন কত প্লাটিলেট ভয়ের কারণ?
ফয়সাল হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমার জ্বর। কোনোভাবেই কমছিল না। সঙ্গে বুকে ও শরীরে তীব্র ব্যথা ছিল। বাসার পাশের একটি ফার্মেসি থেকে এতোদিন ওষুধ খেলেও আর পারছিলাম না। সবশেষে একজনের সহযোগিতায় আজ হাসপাতালে এসেছি। চিকিৎসক দেখে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছেন।
টিকিট কাউন্টার ও ডেঙ্গু পরীক্ষা বুথের সামনে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো রোগী অপেক্ষা করছেন। তাদের কেউ চিকিৎসক দেখিয়ে পরীক্ষা করতে অপেক্ষা করছেন, কেউ পরীক্ষার রিপোর্ট, কেউ আবার টিকিটের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন
তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে গাড়ি চালাতে পারি না। আরও কয়দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় জানি না। গাড়ি না চালালে আয়-রোজগারও বন্ধ। যদি পারতাম অসুস্থতা নিয়েই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যেতাম। এখন সুস্থ হয়ে কোনোরকমে হাসপাতাল ছাড়তে পারলেই হলো।তেজগাঁও নাখালপাড়া থেকে চার বছরের শিশু মুনতাহাকে নিয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালে এসেছেন মা মনি আক্তার। দুইদিনের জ্বরেই মেয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে উল্লেখ করে মা মনি আক্তার বলেন, মেয়েটার গত দুইদিন ধরে প্রচণ্ড জ্বর, পাশাপাশি বাথরুমও হচ্ছে বেশি। কিছুই খেতে পারছে না। তিনি বলেন, আল্লাহ যেন দ্রুত তাকে সুস্থ করে দেন। মেয়ের কষ্ট আমার আর সহ্য হয় না। দুপুরে সরেজমিন হাসপাতালে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টার ও ডেঙ্গু পরীক্ষা বুথের সামনে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো রোগী অপেক্ষা করছেন। তাদের কেউ চিকিৎসক দেখিয়ে পরীক্ষা করতে অপেক্ষা করছেন, কেউ পরীক্ষার রিপোর্ট, কেউ আবার টিকিটের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।
রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এসেছেন পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে। বিশেষ করে তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, নাখালপাড়া, ফার্মগেট, বাড্ডা এবং মিরপুর এলাকা থেকে।
হাসপাতালটির পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে জানা গেছে, বুধবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জ্বর-সর্দি এবং ডেঙ্গু নিয়ে ১৭০ জন রোগী চিকিৎসক দেখাতে টিকিট কেটেছেন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণ পজিটিভ এবং হাসপাতালে ভর্তি উপযোগী হওয়ায় ৯ জনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে। এর আগের দিন (মঙ্গলবার) সর্বমোট ৪৫০ জন রোগী টিকিট কেটে স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭০ জন। এবং গত সোমবার সর্বমোট ৪৩০ জন রোগী টিকিট কেটে স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭ জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির এক কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালটিতে গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন নতুন রোগী আসে। তাদের মধ্যে গড়ে ভর্তি হয় ৭০ থেকে ৮০ জন। পাশাপাশি প্রতিদিন সুস্থ হয়ে হাসপাতালও ছাড়ে ৭০ থেকে ৮০ জনের মতো। যে কারণে রোগীর চাপ তেমন একটা পড়ছে না।
এসব বিষয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কর্নেল একেএম জহিরুল হোসাইন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের হাসপাতালটি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করা হলেও এখন পর্যন্ত রোগী তেমন বেশি বাড়েনি। বর্তমানে আমাদের প্রতিদিন গড়ে ৮০ জনের মতো রোগী ভর্তি হয়। ডিসচার্জও কাছাকাছি রকমের। তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫০০ শয্যা প্রস্তুত থাকলেও রোগী ভর্তি আছে ২৮৬ জনের মতো। রোগী যদি হঠাৎ বেড়েও যায়, আমাদের এই মুহূর্তে ৮০০ শয্যা চালুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখা আছে। আরও যদি বেশি প্রয়োজন হয়, সেটিও আমরা চালু করতে পারবো। অন্যান্য হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকলেও ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ডিএসসিসি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম থাকা প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, সাধারণত এলাকাভিত্তিক হাসপাতালে ভর্তি হতেই রোগী ও তাদের স্বজনরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যেহেতু আমরা দেখছি ডেঙ্গু প্রকোপটা বেশি মুগদা যাত্রাবাড়ীসহ ওইসব এলাকায়, সে কারণে রোগী সংখ্যাও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশি। কারণ মুগদা এলাকার একটা রোগীকে যদি ডিএনসিসি হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়, সেক্ষেত্রে পরিবহন খরচটা মোটামুটি বেশ। অনেকের কাছে হয়তো সেই খরচটাও থাকে না। সুতরাং যে এলাকায় বেশি রোগী হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেশি হবে। তারপরও যদি সেখানে সিট পাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলেই রোগীরা আমাদের হাসপাতালে আসে।
স্যালাইন বা ওষুধের কোনো সংকট আছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে স্যালাইনের কোনো সংকট নেই। ওষুধপত্রও পর্যাপ্ত আছে। পাশাপাশি এখানে পর্যাপ্ত সিটও খালি আছে। সবমিলিয়ে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও বেশ ভালো। সুতরাং কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ঘরে বসে না থেকে হাসপাতালে আসুন, ঝুঁকিমুক্ত ও সুরক্ষিত থাকুন।
সরকারি সব হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার
দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। গত ১৩ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশে ডেঙ্গুর সবশেষ পরিস্থিতি
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে (৯ আগস্ট পর্যন্ত)। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৪২৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ৪২১ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ হাজার ৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৭৫ হাজার ৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৮ হাজার ৮১৪ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৬ হাজার ২৫৫ জন।