বুধবার, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

নতুন দিনের সাকিব-তামিম

নতুন দিনের সাকিব-তামিম

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক :সাকিব-তামিম, খুব স্বাভাবিক দুটি নাম। ২০০৭ এর আগেও এই নামগুলো আলাদা কিছু ছিল না। কিন্তু ওই বিশ্বকাপ থেকে এই নাম দুটো আলাদা মহত্ত্ব নিয়ে বড় হতে থাকে। সেই সঙ্গে স্বাভাবিক দুই নামের গায়ে গুরুত্বের চাদর জড়িয়ে যায়। এতদিনে এই নাম দুটো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অনন্য উজ্জ্বলতার প্রতীক হয়ে গেছে। এমন খুব কম-ই হয় যে একই ডাকনামের ক্রিকেটার আবার ফিরে আসেন দলে। ভারতীয় ক্রিকেটে যেমন কপিল-শচিন-সৌরভ-আজহারউদ্দিন বা ধোনি নাম নিয়ে কেউ আসেননি। তেমনি পাকিস্তান ক্রিকেটেও ইমরান, ওয়াসিম, ওয়াকার বা শোয়েবদের মতো উজ্জ্বল হয়ে কেউ জ্বলেননি।বাংলাদেশ এইদিকে ব্যতিক্রম। সাকিব-তামিম থাকতে একই নামের দুজন চলে এসেছেন বাংলাদেশ দলে। তামিম একটু আগে সাকিব ক’দিন পরে। এশিয়া কাপের দল ঘোষণার দিনে জাতীয় দলে নাম ওঠে নতুন তামিমের (তানজীদ হাসান তামিম)। আর নিয়মিত সদস্য এবাদত হোসেনের ইনজুরিতে কপাল খোলে রিজার্ভে থাকা বোলার সাকিবের (তানজীম হাসান সাকিব)।কাকতালীয় ব্যাপার দুই তামিমের খেলার ধরন, পজিশন এক (ব্যাটার); দুই সাকিবের খেলার ধরন এক (বোলার) তবে পজিশন বড়জন স্পিনার, ছোটজন পেসার। নামের মিল রেখে দুজনের আগমন তো হলো- এবার বড় ভাইদের মতো নতুন দিনের তামিম-সাকিবরা নিজেদের আলো ছড়াবেন তো!দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্য যুব বিশ্বকাপ জয়ের দুই নায়ক একেবারে যে নতুন নাম তা নয়। ২০২০ সালে ঐতিহাসিক কীর্তিতে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করে এসেছেন আগেই। পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করে জাতীয় দলের জন্য পরিপক্ব হয়েছেন। তামিমের চেয়ে সাকিব ছিলেন বেশি নিয়মিত। গত কিছুদিনে বাংলা টাইগার্স, এইচপি, ‘এ’ দলে নিয়মিত ছিলেন পেসার সাকিব। ওই পর্যায়ে তার সাফল্যও দারুণ।যুবদলের গন্ডি পেরোনোর পর ১২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন এই পেসার। তাতে অর্জন ২২ উইকেট, ৫ উইকেট একবার। এছাড়া ৩৭ লিস্ট এ ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ৫৭টি, ৪ উইকেট তিনবার ও ৫ উইকেট ১ বার। আর আছে ২১ টি-টোয়েন্টিতে ২৫ উইকেট। সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে ১৫ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়েছেন। প্রচন্ড গরমের ওই সময়ে পেসারদের বল করাই ছিল কঠিন। সেখানে ১৭ উইকেট পাওয়া কম কৃতিত্বের না।এছাড়া সাম্প্রতিক কালের আরও সাফল্যের মধ্যে সাকিবের ঝুলিতে আছে উইন্ডিজ এ দলের বিপক্ষে সিলেটে ৪ উইকেট এবং ইমার্জিং এশিয়া কাপে মাত্র তিন ম্যাচে ৯ উইকেট। মূলত শ্রীলঙ্কায় হওয়া ওই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সই সাকিবের শ্রীলঙ্কার এশিয়া কাপের দলে বদলি হিসেবে ডাক পেতে সহায়ক হয়েছে।এদিকে তামিমের এগিয়ে আসা গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থেকেই। ওই আসলে ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন এই ব্যাটার। তার দল সুপার লিগে উঠতে ব্যর্থ হয়। ১১ ম্যাচে দুই ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিকে ৪৩ গড়ে ৪৭৪ রান করা তামিম একা কত টানবেন! সেই সাফল্য তামিমকে নির্বাচকদের নজরে এনে দেয়। সুযোগ পান ইমার্জিং এশিয়া কাপের দলে ওপেনার হিসেবে।এরপর বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করেন এই ব্যাটার। শুরুর দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ ও ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে যথাক্রমে ঝড়ো ৫১ ও ৬৮ রান করেন। আর সেমিফাইনালে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষেও ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে থামেন। এই তিনটি আত্মবিশ্বাসী ইনিংস ও তামিম ইকবালের ইনজুরিতে পড়ে নিজে থেকে সরে যাওয়ায় ছোট তামিমের এশিয়া কাপে দরজা খুলে যায়।ক্যারিয়ারে মাত্র ১৮ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি ও ৬ ফিফটিতে ১৩৫০ রান, ৪৬ লিস্ট এ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি ও ৭ ফিফটিতে ১২৭১ এবং ২১ টি-টোয়েন্টিতে ৪৩৭ রান করা তামিমের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায় নতুন কিছু নয়। শুধু নিজের সাবলীল খেলাটা দেখানোর পালা।২০০৬ সালে সাকিব ১৭ বছর বয়সে শুরু করে এখন পর্যন্ত ৬৬ টেস্ট, ২৩৫ ওয়ানডে ও ১১৭ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। তামিম ২০০৭ সালে ১৭ বছর বয়সে শুরু করে এখন পর্যন্ত ৭০ টেস্ট, ২৪১ ওয়ানডে ও ৭৮ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। বড় ভাই সাকিবের চেয়ে তিন বছর বেশি বয়সে জাতীয় দলে পা রাখলেন সাকিব। এখনো অভিষেক হয়নি।যেদিন অভিষেক হবে সেদিন থেকে সাকিবের মতো লম্বা ক্যারিয়ার গড়ার দিন গণনা শুরু করা যেতে পারে তার জন্য। বড় তামিমের চেয়ে পাঁচ বছর বেশি বয়সে জাতীয় দলে পা রাখলেন ছোট তামিম। তার জন্যও ঠিক একই রকম দিন-তারিখ গোনা যেতে পারে অভিষেকের পর থেকে। তবে দিন-তারিখ গৌণ বিষয়, আসল প্রশ্ন হলো নতুন দিনের তামিম-সাকিবরা অগ্রজদের মতো উজ্জ্বল হয়ে জ্বলবেন তো?

 

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন