রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

আশ্রয়ণ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে বাসিন্দারা

আশ্রয়ণ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে বাসিন্দারা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ি এলাকায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে (গুচ্ছগ্রাম) জলাবদ্ধতাসহ নানা সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছেন সুবিধাভোগীরা। টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জলবদ্ধতায় প্রকল্পে চলাচলের সড়ক তলিয়ে থাকায় শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। ভুক্তভোগী বাসিন্দারা বলছেন, তারা খাদ্য সহায়তা চান না, প্রকল্পে চলাচলের সড়ক চলাচলের উপযোগী চান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ধরণীবাড়ী গুচ্ছগ্রামে মাটি ভরাটকরণ ও রাস্তা সংষ্করণে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। লোক দেখানো কয়েক ট্রাক মাটি ফেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সমুদয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সরেজমিন ধরণীবাড়ীর মুন্সিবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের ভিতরে চলাচলের রাস্তায় প্রায় দেড় ফুট উচ্চতায় পানি জমে আছে। টানা কয়েকদিনের জলাবদ্ধতায় পানিতে শ্যাওলা জন্মাতে শুরু করেছে। নির্গমনের পথ না থাকায় নোংরা ও অর্ধপঁচা এসব পানি ও কাদা মাড়িয়ে চলাচল করছেন আশ্রয়ণের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। ঘরের বারান্দার সামনে পানি, চারপাশে পানি। নোংরা এসব পানির মাঝেই বাস করছেন তারা।  আশ্রয়ণের বাসিন্দা খুশি বেগম বলেন, ‘পানিতে অনেক ময়লা আবর্জনা। শিশু ও বয়ষ্ক মানুষ চলাচল করতে পারে না, বের হইতে পারে না। বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার সময় পোশাক, বইপত্র ভিজে যায়। এই পানিগুলো আমাদের এখন বড় সমস্যা। কেউ খোঁজ নিতে আসলো না। আমাদের কেউ দাম দেয় না। মনেহয় আমরা কুত্তা-বিড়াল।’ এই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘আমাদের থাকার জায়গা নাই জন্যে ঘর দিছে। এই ঘরে আমরা আছি। আমরা তো খাবার চাই নাই। একটু মাটি কাটি দিলে আমাদের উপকার হয়।’ আরেক বাসিন্দা মেনেকা রাণী বলেন, ‘আমাদের কারো এমন দুর্দশা নাই। এমন করি বাস করা যায়? চাইরপাশে পানি। একটু বৃষ্টি হইলে পানি জমি থাকে।  আইজ না হইলেও ২০ দিন ধরি পানি। ঘর থাকি বের হওয়া যায় না। বাড়িত একটা প্রতিবন্ধী বাচ্চা। পানিত পড়ার ভয়ে সউগ সময় চিন্তায় থাকি। স্বামী ভাড়ায় অটো চালায়। সেটাও বারান্দা থাকি নামবার পাই না। কামাইয়ো বন্ধ।’ আব্দুল্লাহ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘ কোনও ঘরে ইট খুলি গেইছে। কোনও ঘরে ফাটল ধরছে। কখন যে ওয়াল শরীরের ওপর ভাঙ্গি পড়বে কেউ বলতে পারে না। এমন অবস্থা।  গুচ্ছগ্রামে মাটি কাটা দরকার। কিন্তু মাটি ফেলে নাই। একটু বৃষ্টি হইলে পানি জমি থাকে। চলাচল করা যায় না। মাটি ভরাটের টাকা নয়ছয় করি শ্যাষ।’ প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাট প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা শিউলি ও জরিফ উদ্দিন বলেন, ‘ হালকা করি মাটি দিছে। এক গাড়ি করি মাটি ছিটায় দিয়া গেইছে। বৃষ্টি হইলে পানি জমে, ঘরের ভেতর পানি ঢোকে।  আমাদের খুব সমস্যা। ঘর দিছে। কিন্তু আমাদের সমস্যা দেখার কেউ নাই।’ তাদের ভাষ্য মতে, এক ধরণের অবহেলা আর অযতেœর শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। প্রকল্প এলাকায় জনস্বাস্থ্য প্রকল্প অধিদপ্তর থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলেও সেগুলোর সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না বাসিন্দারা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে করা পানি সরবরাহের এই প্রকল্পের কোনোটির কল নেই, আবার কোনোটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। আবার কোনোটির ট্যাংকিতে ফাটল থাকায় পানি ওঠানোই সম্ভব হয় না। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ধরণীবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি ভরাট ও রাস্তা সংস্কারের জন্য ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কাবিটা প্রকল্পে যথাক্রমে ৬ লাখ ও ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও গুচ্ছগ্রামের সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, এই বরাদ্দের এক চতুর্থাংশ অর্থও প্রকল্পে মাটি কাটায় খরচ করা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন, ‘ মুন্সিবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পটি আমি যোগদান করার পূর্বে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকল্পে জলাবদ্ধতার বিষয়টি জেনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। প্রকল্পে মাটি ভরাট ও সড়ক সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে কি না সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবো।’
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন