ফুলবাড়ীতে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক অনুষ্ঠিত
ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
“ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক বিনিয়োগ দাবি তরুণদের” এই স্লোগানকে সামনে রেখে শুক্রবার ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার একশনএইড বাংলাদেশ ও উদয়াঙ্কুর সেবা সংস্থা (ইউএসএস) এর সহযোগিতায় “ফান্ড আওয়ার ফিউচার”(আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক বিনিয়োগ) এর দাবিতে ফুলবাড়ী প্রেসক্লাব ও উপজেলা প্রেসক্লাব ফুলবাড়ীর সামনে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জলবায়ু ধর্মঘট অংশগ্রহণে যুবরা সরকারি পর্যায়ের বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলো এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ করার আহবান জানায়।
জলবায়ু সংকট নিরসন, ন্যায় বিচার দাবি ও জনগণকে সচেতন করতে একশনএইড বাংলাদেশের সহায়তায় এক্টিভিস্তা নেটওয়ার্ক এর ১১ টিরও বেশি যুব সংগঠনের ৪৫ জন তরুণ এই গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে অংশ করে। এই সংগঠন গুলোর মধ্যে অন্যতম উদ্দীপন ইয়ূথ গ্রুপ, প্রয়াস ইয়ূথ গ্রুপ, উদয় ইয়ুথ গ্রুপ, ধরলা নদী ইয়ুথ গ্রুপ, জাগ্রত ইয়ূথ গ্রুপ, সৃজনী ইয়ূথ গ্রুপ, জয় ইয়ুথ গ্রুপ, আলোকিত ইয়ুথ গ্রুপ, প্রজাপতি ইয়ূথ গ্রুপ, পরিবর্তনের পথে ইয়ূথ গ্রুপ এবং গ্রীণ ভিলেজ ফাউন্ডেশন। একই সময়ে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ,ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট, নীলফামারি, জামালপুর ও বরগুনাসহ বাংলাদেশের ২৬টি জেলায় এবং ৭টি লোকাল ইয়ুথ হাবে তরুণ এক্টিভিস্টা স্বেচ্ছাসেবকরাও এই গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে সংহতি প্রকাশ করে।
এ সময় তরুণরা দলমত নির্বিশেষে সমাজের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের সাথে নিয়ে জলবায়ু সংকট নিরসন, ন্যায়বিচার দাবিতে ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়। তাদের প্ল্যাকার্ড গুলোতে প্রকাশ পায় পৃথিবীকে জলবায়ু সংকট থেকে বাঁচিয়ে তোলার আকুতি। প্লেকার্ডে তাদের প্রতিবাদের অক্ষরে লিখা দাবি জীবাশ্ম জ্বালানীতে বিনিয়োগ বন্ধ করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা,জলবায়ু সুবিচার চাই এ ধরনের স্লোগান।
তাছাড়াও যুবরা বলেন, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানীতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে, তাদের নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে আমাদের এই পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। পুঁজিবাদী মানসিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমণকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানীতে অর্থায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে যার প্রভাব পড়ছে মূলত দক্ষিণের জলবায়ু-সংরক্ষিত দেশগুলোতে। এটি অনুন্নত দেশগুলোতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। আমরা বাংলাদেশের তরুণরা তাই সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমণকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলোর কাছে অবিলম্বে জীবাশ্ম-তহবিল বন্ধ করা সহ জলবায়ু সংকটের কারণে ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়গুলোর জন্য লস এন্ড ডেমেজ এ অর্থায়ন নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে জীবাশ্ম জ্বালানির কোম্পানি ও বাণিজ্যিক কৃষির মত ক্ষতিকারক এরিয়াগুলোতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
জলবায়ু বিষয়ে জনগণ ও নীতি নির্ধারকদের সুবিবেচনার জন্য স্ট্রাইকের বিকল্প নেই বলে জানান ফুলবাড়ী উপজেলার তরুণ এক্টিভিস্টা ও জলবায়ু কর্মী শাহিন আলম বলেন “প্রতিবছর বন্যা ও খরায় ফুলবাড়ী উপজেলায় জীবন ও জীবিকার মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্ম ও বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য টেকসই উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা বাঞ্চনীয়। যত তাড়াতাড়ি আমাদের বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দ এই কাজ করবে তত তাড়াতাড়ি এ পৃথিবী সুরক্ষিত হবে।”
এ সময় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক মিলন,তিনি বলেন,আমাদেরকে সকলের নিজ নিজ জায়গা থেকে জলবায়ু পরিবর্নের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
উদয়াঙ্কুর সেবা সংস্থা এর প্রকল্প সমন্বয়কারী রবিউল ইসলাম। তিনি তার বক্তত্বে জানান,এখুনি সময় স্থায়িত্বশীল ও ন্যায়ভিত্তিক পৃথিবী গড়তে আমাদের মানবিক তরুণ সমাজ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ু সহিষ্ণু টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ফান্ড আওয়ার ফিউচার এর দাবি জোরদার করছে।
গ্রীণ ভিলেজ ফাউন্ডেশন কুড়িগ্রাম এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, আমরা যদি এখনই সোচ্চার না হই তবে নিকট ভবিষ্যতে আমাদেরকে বড় দূর্যোগ ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে, বাস্তুচ্যুত হতে হবে আমাদের মত দেশগুলোর লক্ষাধিক মানুষকে।
আরো বক্তব্য রাখেন, উদ্দীপন ইয়ূথ গ্রুপের সভাপতি শাহীন আলম, শাকিলা আক্তার শান্তা এ্যাক্টিভিষ্টা ফুলবাড়ী। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান(জাহাঙ্গীর),উদয়াঙ্কুর সেবা সংস্থা(ইউএসএস) এর ফুলবাড়ী শাখার প্রোগ্রাম অফিসার লুৎফর রহমান রাফিন, একশনএইড বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইন্সপিরেটর জিনাত রহমান মেলোডী প্রমূখ।