ইসরায়েলি নারী ও দুই শিশু সন্তানকে মুক্তি দিলো হামাস
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : ইসরায়েলি এক নারী ও তার দুই শিশু সন্তানকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ইসরায়েলে অভিযান চালানোর সময় তারা গাজা উপত্যকাভিত্তিক ফিলিস্তিনি এই গোষ্ঠীর হাতে আটক হয়েছিল।
এদিকে তাদের মুক্তি দেওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া এবং আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক হওয়া এক ইসরায়েলি নারী এবং তার দুই সন্তানকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে গ্রুপটির সশস্ত্র শাখার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘একজন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী এবং তার দুই সন্তানকে সংঘর্ষের সময় আটক করার হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ আল জাজিরা বলছে, হামাসের কাসাম ব্রিগেডস একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যাতে দেখা যাচ্ছে, আটককৃত এক নারী ও তার দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে আল জাজিরাতে প্রচারিত ফুটেজটি দূর থেকে ধারণ করা হয়েছে। সেখানে পেছন থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারী এবং ওই দুই শিশুকে দেখানো হয়েছে। ওই ভিডিও ফুটেজে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে – যারা সম্ভবত হামাস যোদ্ধা – একটি বেড়ার কাছে খোলা জায়গায় ওই নারী ও তার দুই শিশুকে রেখে চলে যেতে দেখা যায়, যা ইসরায়েল এবং গাজার মধ্যে সীমান্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ভিডিওটি কবে ধারণ করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনও ভিডিওটির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস এক বিবৃতিতে বলেছে, ওই নারী একজন ইসরায়েলি নাগরিক। বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একজন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী এবং তার দুই সন্তানকে সংঘর্ষের সময় আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’ আল জাজিরার হোদা আবদেল-হামিদ পশ্চিম জেরুজালেম থেকে বলছেন, হামাসের প্রকাশিত ওই ভিডিও ফুটেজটিকে ইসরায়েলি মিডিয়া ‘এক চিমটি লবণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে। তিনি জানান, ‘একজন প্রতিবেদক বলেছেন- হামাস ক্ষতি মেরামতের চেষ্টা করছে এবং এটি কেবল একটি মিডিয়া স্টান্ট। অন্যান্য ইসরায়েলি চ্যানেল বলছে, বন্দি মুক্তির এই ঘটনা আগে ঘটেছে। কেউ কেউ বলছেন, গত শনিবার এই ঘটনা ঘটেছে এবং হামাস এখন তার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নত করার চেষ্টা করছে।’ প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত শনিবার ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর থেকে টানা ছয়দিনের এই সংঘাতে নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে বহু সেনাসদস্য, নারী ও শিশু রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও হাজার হাজার ইসরায়েলি। এছাড়া আরও বহু মানুষকে বন্দি করেছে হামাস। আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলার সময় গত শনিবার থেকে আনুমানিক ১৫০ জনকে বন্দি করেছে হামাস। পরে গত শনিবার থেকে ইসরায়েলের অবিরাম বিমান হামলা গাজার পুরো আশপাশের এলাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে এবং কমপক্ষে ১২০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও হাজার হাজার আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা বলেছে, ইসরায়েলের হাতে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডে আড়াই লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা এটিকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, গত শনিবার থেকে ইসরায়েলে ১৫৫ সেনাসহ ১২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।