মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

হামাসের হামলা পরিকল্পনার তথ্য ১ বছর আগেই পেয়েছিল ইসরায়েল

হামাসের হামলা পরিকল্পনার তথ্য ১ বছর আগেই পেয়েছিল ইসরায়েল

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলার এক বছরেরও বেশি সময় আগে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের এই ধরনের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতো। হামাস যে এই ধরনের আকস্মিক হামলার শুরুর পরিকল্পনা করেছে, সেই বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কাছে তথ্য ছিল। কিন্তু তারপরও কেন প্রাণঘাতী হামলা ঠেকাতে পূর্ব-সতর্কতামূলক কোনও ব্যবস্থা ইসরায়েল নেয়নি, সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার এবং প্রাণঘাতী ঘটনাকে সামনে রেখে ইসরায়েলি কমান্ডারদের পূর্ব-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সাময়িক যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতায় ইতিমধ্যে জটিল পরিস্থিতিতে মোড় নেওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে নিউইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদন। দুই দফায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি ৭ দিন পর্যন্ত চলার পর এর মেয়াদ নতুন করে বাড়াতে কাতার-মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর শুক্রবার থেকে গাজা উপত্যকায় পুরোমাত্রায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের লড়াইয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের কাছে ৪০ পৃষ্ঠার একটি নথি ছিল; যার কোড নাম ‘‘জেরিকো ওয়াল’’। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসরত সম্প্রদায়ের ওপর হামাসের একটি কাল্পনিক অভিযানের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে এই নথিতে। তবে ইসরায়েল কীভাবে হামাসের হামলার বিষয়ে গোপন এই নথি পেয়েছিল সেটি পরিষ্কার নয়। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, গোপন ওই নথি ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সরাসরি হামাসের কাছ থেকে জব্দ করে থাকতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। এছাড়া সম্ভবত আরবি ভাষার নথিটি অনুবাদও করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের শীর্ষ কমান্ডাররা হামাস হামলার ষড়যন্ত্র করছে— এমন সতর্কতাকে উপেক্ষা অথবা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর ইসরায়েলি কমান্ডারদের উপেক্ষা অথবা পাত্তা না দেওয়ার বিষয়ে যে কয়েকটি লক্ষণ দেখা গেছে, তার মধ্যে এটি সর্বশেষ। গাজা সংঘাত দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গাজায় চলমান সংঘাতের প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হামাস-ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের মাঝেই ইসরায়েলে উন্নত অস্ত্র পাঠিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যে কারণে আঞ্চলিক এই সংঘাত বাইরের ক্রীড়ানকদের কল্যাণে স্থায়ী সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। গাজায় সংঘাত চলাকালে ইসরায়েলে উন্নত অস্ত্র সরবরাহের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। গাজা পরিস্থিতির শুরু থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তারা সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং সামরিক পদক্ষেপের পরিবর্তে কূটনীতিকে সুযোগ দেওয়ার জন্য সকল পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাপ্রবাহ তাতে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামাসের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে জানার পর পাত্তা না দেওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি ও সামরিক সহায়তার ঘটনা বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

• বাঙ্কার বাস্টার

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী আরেক দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, হামাসের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ইসরায়েলে ইতিমধ্যে ১০০বিএলইউ-১০০ বোমা পাঠিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। এসব বোমা অত্যন্ত শক্ত অবকাঠামো ভেদ করে ঢুকে পরার পর বিস্ফোরণ ঘটায়। ১০০বিএলইউ-১০০ বোমা ৯০০ কেজি ওজনেরও বেশি একটি ওয়ারহেড বহন করতে পারে। এর আগে এই বোমা কেবল আফগানিস্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সংঘাতে ব্যবহার করা হয়েছে। ‘‘বাঙ্কার বাস্টার’’ নামের এই বোমা অত্যন্ত সুরক্ষিত অবকাঠামো ভেদ করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই বোমা ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। তবে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে আসা ইসরায়েলে কেবল এই বোমাই রপ্তানি করেনি যুক্তরাষ্ট্র। বরং গত ৭ অক্টোবর গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে ১৫ হাজারের বেশি বোমা, ৫৭ হাজারের বেশি আর্টিলারি গোলাবারুদ পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের সি-৭ সামরিক মালবাহী বিমানে করে এসব অস্ত্র ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। মার্কিন এই দৈনিক বলছে, ইসরায়েলের কাছে ৫ হাজারের বেশি আনগাইডেড এমকে৮২ বোমা, ৫ হাজার ৪০০টিরও বেশি এমকে৮৪ বোমা, প্রায় ১ হাজার জিবিইউ-৩৯ বোমা এবং ৩ হাজারের মতো নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম জেডিএএমএস পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকসহ উপত্যকায় ভয়াবহ প্রাণঘাতী কিছু হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোমার এক হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ওই হামলার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছে, হামাসের এক নেতাকে হত্যা করতে হামলাটি চালানো হয়েছিল এবং ইসরায়েলি বাহিনী তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন