খাজার কৌশলের কাছে হার মানল আইসিসি!
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে পার্থ টেস্টে বার্তা সংবলিত বিশেষ জুতা পরে খেলতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খাজা। আইসিসির নিয়মের বেড়াজালে সেটি করতে পারেননি তিনি। তবে ঠিকই হাতে কালো বাহুবন্ধনী পরে খেলেছিলেন খাজা। যার কারণে তাকে তিরস্কার করে আইসিসি। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেননি তিনি। বক্সিং ডে টেস্টে জুতায় শান্তির প্রতীক পায়রা এবং জলপাই ডালের প্রতীক নিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অনুমতি পেলেও খাজাকে আবারও আটকে দেয় আইসিসি।
তবে খাজা যেন দমে যাওয়ার পাত্র নন। নিজের মতো করেই প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে নিয়েছেন তিনি। খাজা তার জুতায় নিজের দুই মেয়ের নাম লিখে খেলতে নেমেছেন আজ। ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে আইসিসির বিরুদ্ধে যেন একাই লড়ে যাচ্ছেন অজি এই ওপেনার। নিজের দুই মেয়ের নামও প্রতিবাদেরই অংশ। পার্থ টেস্টে আইসিসির আপত্তির পর খাজা বলেছিলেন, ‘যখন আমি দেখি হাজার হাজার নিরপরাধ শিশু মারা যাচ্ছে, ওই জায়গায় আমি আমার দুটি মেয়েকে কল্পনা করি। কী হতো যদি ওখানে ওরা থাকত?’ এবার নিজের দুই মেয়ের নাম দিয়েই ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান জানান দিলেন তিনি।
আইসিসির বিরুদ্ধে খাজার লড়াই শুরু যেভাবে
ইসরায়েলি বাহিনীর মাস দুয়েকের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। শত শত মানুষ প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকেই। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন খাজা। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিশেষ বার্তা সম্বলিত জুতা পরে খেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাতে বাধ সাধে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। তাদের নিয়ম অনুযায়ী– ক্রিকেটার বা ম্যাচের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কোনো ধরনের বার্তাসংবলিত পোশাক, খেলার সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন খাজা। পাকিস্তানের বিপক্ষে পার্থ টেস্ট শুরুর আগে গা গরমের সময় স্লোগানসংবলিত সেই জুতা পরে মাঠে নামেন। তবে জুতার ওপর লেখা বার্তাটা টেপ দিয়ে ঢেকে রাখেন। এর আগে দলের অনুশীলনেও ওই জুতা পরে খেলেছিলেন ৩৬ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান এই ওপেনার। যেখানে লেখা– ‘স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার, প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান।’
এরপর এক ভিডিওবার্তায় প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে খাজা বলেন, ‘যারা আমার কথায় কোনোভাবে কষ্ট পেয়েছেন, তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন করতে চাই। স্বাধীনতা কি সবার জন্য নয়? প্রতিটি জীবন কি সমান নয়? ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে আপনি কোন জাতি, কোন ধর্মের, কোন সংস্কৃতির তাতে কিছু আসে যায় না। সত্যি কথা বলুন তো, আমি প্রতিটি জীবন সমান বলায় যদি অনেক মানুষ কষ্ট পান, আমাকে ফোন করেন এবং বলেন, সেটাই কি বড় সমস্যা নয়? এই মানুষগুলো অবশ্যই আমি যা লিখেছি, তাতে বিশ্বাস করেন না। সংখ্যাটা অল্প নয়। কত মানুষ এভাবে ভাবেন, শুনলে আশ্চর্য হবেন।’
এরপরই নিজের দেওয়া বার্তাটি রাজনৈতিক নয় বলে দাবি করেন খাজা, ‘আমি আমার জুতায় যেটা লিখেছি, সেটা রাজনৈতিক নয়। আমি কোনো পক্ষ নিইনি। আমার কাছে প্রত্যেকটি মানুষের জীবন সমান। একজন ইহুদি, মুসলিম, হিন্দু কিংবা অন্য ধর্মের, প্রত্যেকের জীবন আমার কাছে সমান। যাদের কথা বলা অধিকার নেই, আমি তাদের হয়ে কথা বলছি। এটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।’
খাজাকে আইসিসির তিরস্কার
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার সময় কোনো আর্মব্যান্ড পরার জন্য ক্রিকেট বোর্ড ও আইসিসি থেকে অনুমতি নিতে হয়। পার্থে কালো আর্মব্যান্ড পরে খেললেও তার আগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) ও আইসিসি থেকে অনুমতি নেননি খাজা। যাতে আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশন ভঙ্গ করেছেন খাজা। আইসিসির একজন মুখপাত্র জানান, ‘উসমান খাজা আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনের পোশাক ও সরঞ্জাম নিয়মের “এফ” ধারা ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও আইসিসির পূর্বানুমতি ছাড়াই উসমান ব্যক্তিগত বার্তা প্রদর্শন করেছেন। এটি “অন্যান্য নিয়ম ভঙ্গের” আওতায় পড়ে, প্রথম অপরাধে যেটির শাস্তি তিরস্কার।’ প্রথমবার তিরস্কারে কোনো শাস্তি না থাকলেও একই কাজ বার বার করলে শাস্তি পাবেন খাজা। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, ১২ মাসের মধ্যে চারবার এমন অপরাধ করলে ম্যাচ ফির ৭৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়।
খাজার পাশে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া
খাজার প্রতি আইসিসির আচরণে অবাক হয়েছেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তার মতে, ফিলিস্তিনের প্রতি খাজার সমর্থন এবং মার্নাস ল্যাবুশেনের ধর্মীয় আবেগ দেখিয়ে ঈগলের স্টিকার লাগানো একইদিকে ইঙ্গিত করে। বাইবেলের একটি শ্লোকের দিকে ইঙ্গিত করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটের বিপরীত দিকে ঈগলের স্টিকার ব্যবহার করেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার মার্নাস ল্যাবুশেন। খাজাসহ অস্ট্রেলিয়ান দলের সব খেলোয়াড়ই ব্যাটে নিজেদের স্পন্সরের স্টিকার ব্যবহার করে থাকেন। আর এই ব্যাপারে আইসিসির কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। প্যাট কামিন্স গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সমর্থন জানান সতীর্থ উসমান খাজাকে, ‘আমরা সত্যিই উজিকে (উসমান খাজা) সমর্থন জানাই। আমার মনে হয়, সে এমন কিছুর প্রতিবাদ করছে যা সে বিশ্বাস করে আর আমি এও মনে করি সে সম্মানের সঙ্গেই কাজটা করছে।’ এদিকে আইসিসির এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার মাইকেল হোল্ডিং। তার মতে, খাজার প্রতি এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নিজেদের দ্বিমুখী আচরণ প্রকাশ করছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।