গাজায় উন্মুক্ত স্থানে থাকছে বাস্তুচ্যুত মানুষ, ছড়াচ্ছে রোগ-বালাই
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা উন্মুক্ত স্থানে বসবাস করছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এমনকি বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের অনেকেই আবার পার্কেও থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
টানা আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বর্বর এই হামলার জেরে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটির লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীদের অনেকেই ‘উন্মুক্ত স্থানে, পার্কে’ বসবাস করছেন বলে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর জুলিয়েট তোমা বিবিসিকে জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় (ওসিএইচএ) অনুসারে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজার দক্ষিণে অবস্থিত মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাতে কমপক্ষে এক লাখ মানুষ পালিয়ে গেছেন।ইউএনআরডব্লিউএর জুলিয়েট তোমা বলেছেন, জাতিসংঘকে ‘সীমিত সহায়তা’ আনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গাজার মানবিক চাহিদা ‘ব্যাপকভাবে বেড়েছে’। তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকার যেসব এলাকায় আমাদের প্রবেশ করা উচিত সেখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে ইউএনআরডব্লিউএ বিধিনিষেধের সম্মুখীন’ হচ্ছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা গাজার মানুষের জন্য সাহায্যের পরিমাণ সীমিত করছে না এবং সমস্যাটি এসব সহায়তার বিতরণ নিয়ে হচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, অক্টোবরের ৭ তারিখ থেকে গাজায় ২১ হাজার ৬৭২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হামলায় আরও ৫৬ হাজার ১৬৫ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।
বিবিসি বলছে, ৪১ কিমি (২৫ মাইল) দীর্ঘ এবং ১০ কিমি প্রশস্ত গাজা ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তার প্রবেশ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সামরিক অভিযানের শুরুতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি তারা দক্ষিণ গাজায় খান ইউনিসে আক্রমণ ব্যাপক জোরদার করেছে। এটিকে তারা হামাসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে দেখে থাকে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শনিবার সন্ধ্যায় এক টিভি ভাষণে বলেছেন, ইসরায়েল ‘সব ফ্রন্টে লড়াই করছে’। তিনি চিফ অব জেনারেল স্টাফের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, চলমান এই যুদ্ধ ‘অনেক মাস ধরে’ চলবে, যতক্ষণ না ইসরায়েল ‘আমাদের সকল বন্দির মুক্তি এবং হামাসকে নির্মূল করার’ লক্ষ্য অর্জন না করে। এমন পরিস্থিতিতে রাফাহ থেকে ইউএনআরডব্লিউএর গাজার পরিচালক টম হোয়াইট বিবিসিকে বলেন, চলমান এই সংঘাতের মধ্যে নিরাপত্তার জন্য ‘দশ লাখেরও বেশি মানুষ’ এই শহরটিতে আছেন।হোয়াইট বলছেন, নিরাপত্তার খোঁজে ‘লাখ লাখ লোক ‘ রাফাহ শহরে এসেছেন এবং শহরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ‘কোনও দাগই আর অবশিষ্ট নেই’। সীমান্তবর্তী এই শহরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ইউএনআরডব্লিউএর স্কুল এবং পৌরসভা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অবকাঠামোও রয়েছে। তিনি জুলিয়েট তোমার করা মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, ‘লাখ লাখ মানুষ এখন প্লাস্টিকের ছোট টুকরোগুলোর নিচে খোলা জায়গায় ঘুমাচ্ছে’।নিজেদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকাজুড়ে ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অন্যদিকে ওসিএইচএ-এর মতে, রাফাহ শহরে বর্তমানে বাস্তুচ্যুত মানুষের যে বিশাল ঢেউ দেখা দিয়েছে তা খান ইউনিস এবং ভূখণ্ডের অন্যান্য অংশে তীব্র লড়াইয়ের কারণে। খান ইউনিসের বাসিন্দারা ইসরায়েলি সৈন্য ও হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র বন্দুক যুদ্ধের কথা জানিয়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবির, মাগাজি এবং আল-বুরেজসহ শনিবার গাজার অন্যত্রও লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আবারও গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে সংক্রামক রোগের বিস্তারের বিষয়ে সতর্ক করেছে। ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাজাজুড়ে রোগের সংখ্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪০০ জনের ডায়রিয়ায়, ৫৫ হাজার ৪০০ জনের উকুন ও স্ক্যাবিসের এবং ১২৬ জনের মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।