নোয়াখালীতে ৪৭ বছর পর পুকুরে অবরুদ্ধ কুমির উদ্ধার
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে প্রায় ৪৭ বছর ধরে পুকুরে অবরুদ্ধ একটি কুমির উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে উপজেলা চরহাজারী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরহাজারী গ্রামের কুমিরবাড়ির পুকুর থেকে বন্যপ্রাণী ও অপরাধ দমন ইউনিটের একটি দল কুমিরটি উদ্ধার করে। এ সময় ওই বাড়িতে উৎসুক লোকের ভিড় জমে। জানা গেছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে কুমিরটি চট্টগ্রামের ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হবে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিরটি গত ৪৭ বছর উপজেলার চরহাজারী গ্রামের কুমির আলা বাড়ির পুকুরের লোনা পানিতে অবৈধভাবে অবরুদ্ধ ছিল। বাড়ির পুকুরে কুমির থাকার বিষয়টি এলাকাবাসী জানতেন। ফলে স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি পরিচিতি পায় কুমিরবাড়ি হিসেবে। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় বন্যপ্রাণী ও অপরাধ দমন ইউনিট। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালিয়ে কুমিরটি উদ্ধার করে নোয়াখালী উপকূলীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয়দের মধ্যে জনশ্রুতি রয়েছে অনেক মানুষ মানত করে এ কুমিরকে খাবার দিত। বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, ৫০ বছরেরও বেশি বয়সী কুমিরটির ওজন প্রায় ১০০ কেজি। চরহাজারী গ্রামের মো. খুরশিদ আলম ১৯৭৭ সালে বাগেরহাটের খান জাহান আলীর মাজার থেকে দুটি কুমির এনে নিজ বাড়ির পুকুরে লালনপালন শুরু করেন। এর মধ্যে পুরুষ কুমিরটি ২০ বছর আগে মারা যায়। এরপর থেকে নারী কুমিরটি সঙ্গীহীন অবস্থায় ছিল। লোনা পানির কুমিরটি ‘সল্ট ওয়াটার কোকোডাইল’ প্রজাতির বলে জানান রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন এবং দেশের উপকূলীয় এলাকা এ জাতীয় কুমিরের আবাসস্থল। তবে তারা মিঠা পানিতেও থাকতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকের সুবাদে কুমিরটির খবর নজরে আসে বন্যপ্রাণী ও অপরাধ দমন ইউনিটের। বিষয়টি যে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর পরিপন্থী তা প্রয়াত খুরশিদ আলমের পরিবারের সদস্যদের কারো জানা ছিল না। খুরশিদ আলম ২০ বছর আগে মারা যান। তার তিন ছেলে কেউই বাড়িতে থাকেন না। আইন জানার পর তারা স্বেচ্ছায় কুমিরটি হস্তান্তর করতে রাজি হলে শনিবার উপকূলীয় বনবিভাগ নোয়াখালীর সহযোগিতায় বন্যপ্রাণী ও অপরাধ দমন ইউনিটের একটি দল কুমিরটি উদ্ধার করে। সন্ধ্যায় জেলা সদরে উপকূলীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখা হয় কুমিরটি। সেখান থেকে চট্টগ্রামের ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় নোয়াখালীর উপকূলীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ, বন্যপ্রণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। চরহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ জেড এম মহিউদ্দিন সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪৭ বছর উপজেলার চরহাজারী গ্রামের একটি বাড়ির পুকুরে কুমির আছে বলে লোকজন জেনে আসছে। যার কারণে বাড়িটি ‘কুমিরওয়ালার’ বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। প্রায় ৪৭ বছর পর কুমিরটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় ওই বাড়িতে উৎসুক লোকের ভিড় জমে। জনশ্রুতি রয়েছে, অনেক মানুষ মানত করে কুমিরকে খাবার দিতেন।