জিনদের একটি দল যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছিল
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে যত জীব সৃষ্টি করেছেন এর মধ্যে শুধু মানুষ ও জীন জাতিকে তার ইবাদত ও বিধি-বিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। বিচার দিবসে এই দুই জাতির কাছ থেকে হিসাব গ্রহণ করা হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ
আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে। (সূরা, আয-যারিয়াত, (৫১), আয়াত, ৫৬)
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসুল আসেনি, যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেছে।’ (সূরা আনআম, আয়াত, ১৩০) হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী হিসেবে আগমনের পর তাদের ওপরও ইসলাম গ্রহণ আবশ্যক। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেমন মানব জাতির কাছে নবী করে পাঠানো হয়েছিল, তেমনি তিনি জিন জাতিরও নবী ছিলেন। তিনি তাদের মধ্যেও দীনের প্রচার করেছিলেন। জিনদের একটি দল আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। জিনদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে একটি সূরাও নাজিল করা হয়েছে সূরা জিন নামে।
জিনদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি হলো—
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির আগে জিনেরা আসমান পর্যন্ত যেতে পারতো, তাতে তাদেরকে কোন বাধা দেওয়া হতো না, কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের পর তাদের আসমানের কাছে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হল। কোন জিন বা শয়তান সেখানে যেতে চাইলে উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপের মাধ্যমে তাড়িয়ে দেওয়া শুরু হলো।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরাআনে বর্ণিত হয়েছে—
وَ حَفِظۡنٰهَا مِنۡ کُلِّ شَیۡطٰنٍ رَّجِیۡمٍ
আর আমি তাকে সুরক্ষিত করেছি প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে। (সূরা হিজর, (১৫), আয়াত, ১৭)
অর্থাৎ, শয়তান যখন আকাশের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন তাকে আকাশ থেকে জ্বলন্ত শিখা (উল্কা) ছুঁড়ে মারা হতো। মহান আল্লাহ বলেছেন যে, আমি আকাশকে প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান থেকে রক্ষা করে থাকি ওই সকল গ্রহ-নক্ষত্র দ্বারা, যা আঘাত হেনে শয়তানকে পালাতে বাধ্য করে।
সহিহ বুখারির এক বর্ণনায় আছে, জিনরা যখন পরিস্থিতির এই পরিবর্তন লক্ষ করল, তখন তাদেরকে আসমানে যেতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে, কী এর রহস্য, তা জানার জন্য তাদের অন্তরে কৌতূহল দেখা দিল। এ উদ্দেশ্যে তাদের একটি দল সারা পৃথিবী পরিভ্রমণে বের হল।
এটা সেই সময়ের কথা, যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে মক্কা মুকাররমায় ফিরে আসছিলেন। পথে তিনি নাখলা নামক স্থানে যখন ফজরের নামাজ পড়ছিলেন এবং নামাজে কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন, ঠিক সেই সময় জিনদের সেই দলটি সেখান দিয়ে যাচ্ছিল।
কোরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ তাদের কানে পৌঁছাল। তাদের আগ্রহ জন্মাল এবং বিষয়টা কী তা জানার লক্ষে তারা সেখানে থেমে গেল। তারা গভীর মনোযোগের সাথে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিলাওয়াত শুনতে লাগল। ভোরের শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশে খোদ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে পবিত্র কালামের তিলাওয়াতে জিনেরা চমৎকৃত হলো এবং তাদের অন্তরে তা এমনই প্রভাব বিস্তার করল যে, তারা নবীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো এবং তখনই ইসলাম গ্রহণ করে ফেলল।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
قُلۡ اُوۡحِیَ اِلَیَّ اَنَّهُ اسۡتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الۡجِنِّ فَقَالُوۡۤا اِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡاٰنًا عَجَبًایَّهۡدِیۡۤ اِلَی الرُّشۡدِ فَاٰمَنَّا بِهٖ ؕ وَ لَنۡ نُّشۡرِکَ بِرَبِّنَاۤ اَحَدً
‘বলুন! আমার প্রতি ওহি অবতীর্ণ হয়েছে, জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে (কোরআন) শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথের নির্দেশ করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরিক করব না।’ (সূরা জিন, আয়াত, ১-২)
তারপর তারা নিজ সম্প্রদায়ের কাছেও ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গেল। তারা তাদের কাছে গিয়ে যা-যা বলেছিল, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে তা তুলে ধরেছেন এভাবে—
‘স্মরণ করো! যখন আমি তোমার প্রতি জিনদের একটি দলকে আকৃষ্ট করেছিলাম, যারা কোরআন পাঠ শুনেছিল। যখন তারা তার নিকট পৌঁছাল, তখন তারা বলল, চুপ করে শোনো। কোরআন পাঠ শেষে তারা নিজ সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল।
…হে আমাদের সম্প্রদায়, আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। আল্লাহ তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদের মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।’ (সূরা আহকাফ, আয়াত, ২৯-৩১)