রমজানের ফজিলত ও করণীয়
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : মহান আল্লাহ তায়ালা কোনো কোনো সময় ও স্থানকে অন্যের উপরে প্রাধান্য দিয়েছেন। এর হেকমত একমাত্র তিনিই জানেন। তিনি রমজান মাসকে অন্যান্য মাসের তুলনায় অগ্রধিকার দিয়েছেন। এটা যেন নক্ষত্রের মধ্যে সূর্যের মতো। এ মাসে রয়েছে অনেক ফজিলত ও নানা বৈশিষ্ট্য। এ মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৫) হজরত ওয়াসিলা ইবনুল আস্কা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এরশাদ করেন, ইব্রাহিম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের সহিফাসমূহ রমাজানের প্রথম রাত্রিতে অবতীর্ণ হয়। তাওরাত অবতীর্ণ হয় ষষ্ঠ রমজানে। ইঞ্জিল অবতীর্ণ হয় ১৩তম রমজানে। আল ফুরকান তথা কোরআন অবতীর্ণ হয় ২৪তম রমজানে। (মুসনাদে আহমদ)
কোরআন নাজিলের মাস
এই মাসের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা এই মাসে রোজা ফরজ করেছেন। এরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববতীদেরকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারত।
তওবার মাস
এটি তওবা ও মাগফিরাতের মাস। সমস্ত গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের মাস। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এক জুমা থেকে অন্য জুমা, এক রমজান থেকে অন্য রমজান মাঝখানের সমস্ত গুনাহের জন্য কাফফারা। যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (মুসলিম শরীফ) মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় সালাত আদায় করে তার পেছনের জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আরও এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে নামাজ পড়ে তার পেছনে জীবনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি রমজান পাওয়ার পরেও তার গুনাহকে মাফ করিয়ে নিতে পারে না তার বিরুদ্ধে হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম দোয়া করেন। সেই বদ দোয়ার উপরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমিন আমিন বলেন। সুতরাং এই দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাস
এই মাসটি হচ্ছে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাস। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন, রমজান আগমন করলে একজন ঘোষক ঘোষণা দিতে থাকে। হে কল্যাণের অভিযাত্রী! অগ্রসর হও। হে গুনাহগার! ক্ষান্ত দাও। রমজানের প্রতি রাত্রে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।
জান্নাতের দরজাসমূহ খোলার মাস
রমজানের মাসেই জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজায়সমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন রমজান আসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজারসমূহকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়। (তিরমিযি শরিফ) সুতরাং আমলের মাধ্যমে রমজানে এমন মর্যাদা হাসিল করা যায় যা অন্য মাসে করা যায় না।
ধৈর্যের মাস
রমজান ধৈর্যের মাস। ধৈর্যের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দিতে হয় দীর্ঘ ইবাদতে। যেমনি ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় লম্বা সময় সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তথা পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। সূরা আয-যুমারের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণ দেওয়া হবে হিসাব ছাড়া।
দোয়া কবুলের মাস
রমজান হচ্ছে দোয়া কবুলের মাস। রোজার আলোচনার পর পরই আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া কিছুতেই বৃথা যায় না। রোজাদারের দোয়া যতক্ষণ না সে ইফতার করে। ইনসাফগার বাদশার দোয়া। মাজলুমের দোয়া। (মুসনাদে আহমাদ)
কদরের মাস
রমজান হচ্ছে দানশীলতার মাস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বাধিক দানশীল। আর রমজন মাসে তিনি সবচেয়ে বেশি দান করতেন। যখন জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম তার সাথে সাক্ষাত করত, তখন তিনি প্রবল বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল হতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ২৩০৮)
রমজানে এমন একটি রাত রয়েছে, এ এক রাতে এবাদতের ফজিলত এক হাজার মাসের চেয়েও বেশি। যে ব্যক্তি এই রাতের এবাদত থেকে বঞ্চিত হয় সে সবকিছু থেকেই বঞ্চিত হয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, লাইলাতুল কদর হাজারের মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা আল কদর)
হজরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই এই মাস তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছে। এতে এমন একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাসের তুলনায় বেশি উত্তম। যে তার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয় সে সব ধরনের কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হয়। আর এর কল্যাণ থেকে একমাত্র বঞ্চিতরাই বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজা)