চাঁদপুরে দাদি-নাতিকে কুপিয়ে হত্যা
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যে গভীর রাতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে প্রবাসীর বাড়িতে ঢুকে দাদি ও নাতিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত নাতনিকে রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার অবস্থা আরও অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সোমবার রাতে উপজেলার ২ নম্বর বাকিলা ইউনিয়ন পশ্চিম রাধাসার বকাউল বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা বোরখা পরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পিবিআই তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
নিহতরা হলেন ওই বাড়ির ইউসুফের ছেলে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত (১২) ও তার মা হামিদা (৭০)। আহত শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হালিমা (১৪) ইউসুফের মেয়ে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান চিকিৎসক।
ওই গ্রামের খান বাড়ির বাবলু বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে আরাফাতের মা শাহিন আমাকে ফোন করে তাদের বাড়িতে ডাকাত ডুকেছে; অনেককে কুপিয়েছে বলে ফোন করেন। পরে স্থানীয় মসজিদের মাইকে বকাউল বাড়ির ডাকাত ডুকেছে বলে প্রচার করা হয়। পরে আমিসহ কয়েকজন ওই বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি প্রবাসী ইউসুফের মায়ের মৃতদেহ খাটের ওপর পড়ে আছে। তার ছেলে আরাফাত ও মেয়ে হালিমা নিচে আহত অবস্থায় পড়ে আছে। তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল।
এরপর স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও অন্যদের সহযোগিতায় আহতদের কাঁধে করে রাস্তায় এনে পাশের বাড়ি থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে হাসপাতালে নিয়ে আসি। আসার পথেই আরাফাত মারা যায়। হাসপাতাল থেকে আরাফাতের বোন হালিমাকে কুমিল্লা মেডিকেলে পাঠানো হয়। শুনেছি সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। তার পিঠে ও বুকে কোপ দেওয়া হয়েছে।
অটোরিকশা চালক জহির বলেন, রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। আনুমানিক সাড়ে ১২টার পরে আমার বাড়িতে আহত আরাফাত ও তার বোন হালিমাকে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে অটোরিকশাযোগে তাদের হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।
স্থানীয়রা জানান, তিনটি বিল্ডিং রেখে কেন ‘ডাকাত দল’ টিনের ঘরে ডুকল? ডাকাত দল ‘ডাকাতির’ উদ্দেশ্য ওই ঘরে প্রবেশ করলে, ঘর থেকে কোনো স্বর্ণালংকার খোয়া যায়নি। এমনকি হামিদা বেগমের গলার স্বর্ণের চেন ও কানে স্বর্ণের দুলও আছে।
হাজীগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টিতে ‘ডাকাতির’ খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তথ্য নিশ্চিত করে জানান, কুয়েত প্রবাসী মো. ইউসুফের মা হামিদা তার নাতি ও নাতনিকে নিয়ে আলাদা একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা তাদের বসতঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এ ঘটনা ঘটায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই দাদি ও নাতির লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রবিউল আলম তরুণ জানান, প্রবাসী মো. ইউসুফের মা আলাদা একটি বসতঘরে থাকতেন। তাই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হওয়ায় ওই দুই শিশু মায়ের সঙ্গে তাদের বসতঘরে না থেকে রাতে দাদির সঙ্গে ঘুমাতে যায়।