বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

পাকিস্তানে নতুন সামরিক অভিযান কি জঙ্গিবাদ রুখতে পারবে?

পাকিস্তানে নতুন সামরিক অভিযান কি জঙ্গিবাদ রুখতে পারবে?

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে নতুন সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান৷ তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এরফলে প্রতিবেশি রাষ্ট্র আফগানিস্তান শাসন করা তালেবানের সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা বাড়তে পারে৷

 

জঙ্গিবাদ রুখতে ও সশস্ত্র সংঘাত নিয়ন্ত্রণে এক নতুন সামরিক অভিযান শুরু করেছে পাকিস্তান৷

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার ‘আযম-ই-ইসতেহকাম’ নামের একটি অভিযান শুরু করেছে৷ উর্দু এই শব্দের অর্থ হচ্ছে স্থিতিশীলতা৷

 

গত দুই বছরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে সহিংস হামলার ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে৷

 

এসব হামলায় চলতি বছর অন্তত ৬২ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন৷ সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গোয়েন্দা সূত্র নির্ভর ১৩ হাজারের বেশি অভিযান চালিয়ে ২৪৯ ব্যক্তিকে হত্যা এবং ৩৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ নিহতরা ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে সামরিক বাহিনী৷

 

এসব হামলার অধিকাংশের দায় স্বীকার করেছে তাহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)৷ একাধিক উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তানে সরকার উৎখাত করতে চায়৷ টিটিপি ইসলামের সবচেয়ে কট্টর ব্যাখ্যার প্রয়োগ ঘটিয়ে পাকিস্তান শাসন করতে চায়৷

 

আদর্শগত দিক থেকে গোষ্ঠীটির সঙ্গে আফগান তালেবানের মিল রয়েছে৷ ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুর্নদখল করে নেয় তালেবান৷

 

ইসলামাবাদ তারপর থেকে বারবার অভিযোগ করে আসছে যে পাকিস্তানে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে আফগানিস্তান৷ আফগান তালেবান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷

 

পাহাড়ি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখা উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর নিরাপদ আস্তানা হিসেবে পরিচিত৷ সেখানে টিটিপি এবং সেটির স্থানীয় সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট’ সক্রিয় রয়েছে৷

 

নতুন পরিকল্পনায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরের পাশাপাশি সীমান্তের ওপারে আফগানিস্তানেও জঙ্গি নিধন অভিযান চালানোর কথা বলছে ইসলামাবাদ৷ দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই৷”

 

এক ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এই বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ রাষ্ট্রবিরোধী নৈরাজ্যবাদী এবং ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে তা তারা যে সম্প্রদায় বা ধর্মেরই হোক না কেন৷’

 

কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, নতুন এই অভিযানের কারণে ইসলামাবাদের সঙ্গে কাবুল শাসন করা তালেবানের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে৷

 

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের মাদিহা আফজাল বলেন, ‘নতুন সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এমন এক সময়ে পরিচালনা করা হচ্ছে যা অন্য আরো কারণের প্রতিফলন মনে হচ্ছে৷ পাকিস্তান টিটিপির সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে সব বিকল্প চেষ্টা করে ফেলেছে এবং এখন আফগান তালেবানকে টিটিপির ওপর চাপ দিতে বলছে৷’

 

তিনি মনে করেন যে টিটিপির সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা এবং গোষ্ঠীটির ওপর চাপ প্রয়োগে কাজ হয়নি৷

 

গত মার্চে পাকিস্তান আফগানিস্তানে অবস্থান করা পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর আস্তানায় বিমান হামলা চালিয়েছিল৷ দেশটি সাধারণত এধরনের হামলা চালায় না৷

 

সেই হামলায় আট ব্যক্তি প্রাণ হারান এবং আফগান বাহিনী সীমান্তে পাকিস্তানের দিকে গুলি ছোঁড়ে৷

 

পাকিস্তানে সবাই অবশ্য সামরিক অভিযানের পক্ষে নন৷ দেশটির কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত সপ্তাহে জানিয়েছেন যে তিনি উত্তরপশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে সামরিক অভিযান চালানোর বিপক্ষে৷

 

তিনি তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে এই অভিযানের বিপক্ষে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন৷

 

পিটিআই বর্তমানে প্রাদেশিক পর্যায়ে খাইবার পাখতুনখা শাসন করছে৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন