বৃহস্পতিবার, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

নদীতে ইলিশ  না থাকা জেলে  পরিবারে হাহাকার।। 

নদীতে ইলিশ  না থাকা জেলে  পরিবারে হাহাকার।। 
সেলিম রেজা তজুমদ্দিন ( ভোলা) প্রতিনিধি।।
 মেঘনায় জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। ফলে শূন্য হাতে জেলেরা ফিরে আসছেন। প্রতিবছর এমন সময়ে জেলেরা মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকত। কিন্তু এবার তার উল্টো চিত্র।
তজুমদ্দিন  উপজেলার সুলিজ  ঘাট, চৌহমোহনী ঘাট, গুরিন্দ ঘাট, ধরণী খাল ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ঘাটগুলোতে ইলিশ নেই বললেই চলে। মেঘনায় জেলেদের জালে শুধু ইলিশই নয়,  আশানুরূপ অন্য মাছও ধরা না পড়ায় জেলেদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
ইলিশের ঘাটগুলোতে বর্তমানে ইলিশ মাছের তীব্র সংকটের কারণে ইলিশ আহরণ ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত মেঘনার উপকূলের হাজার হাজার জেলে এবং ব্যবসায়ীরা চরম হতাশা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
 জেলেদের জালে মাছ না মিলায় জেলে পল্লিগুলোতে শূন্যতা বিরাজ করছে। কোনো কোনো জেলেদের জালে দুই একটা ইলিশ মিললেও তার দাম সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার অনেক বাইরে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, স্বল্প পরিমাণ ইলিশ ঘাটে আসলেও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জেলে, আড়তদার ও শ্রমিকসহ অনেকেই বসে বসে পুঁজির টাকা খরচ করছেন। এলাকার মানুষের চোখে-মুখে এখন অভাবের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ধরনী খালের কামাল মাঝি বলেন, নদীতে এবার মাছ নাই, আমরা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ  নিয়েছি, সেই টাকা  দিতে পারতেছি না , আমরা তো সংসারে চালাইতে পারতেছি না। এভাবে প্রতি বছর আমরা মহাজনের থেকে  দাদনের টাকা নিতেছি সেই টাকা আর দিতে পারিনা। বলে ধীরে ধীরে মহাজনের টাকার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
সুলিজ ঘাটে  কবির মাঝি বলেন,  প্রতিটি  নৌকাতে জেলের সংখ্যা  ৮/১০ জন, দশটা পরিবার তাকিয়ে থাকে একটি নৌকার দিকে কখন মাছ নিয়ে আসবে নদী থেকে কিন্তু আশা অনুরূপ মিলিছে না মাছ।  ,বিগত বছরগুলোতে এ সময় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়েছিল। অথচ এবার সময় অতিবাহিত হলেও জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না।
সুলিজ ঘাটের শ্রমিক সলেমান  বলেন, গাঙ্গে মাছ না থাকায় আমাদের সংসার চালাতে পারছিনা।
ইলিশের অকাল সম্পর্কে চৌহমোনী জেলে হোসেন মাঝি বলেন, এ সময় মৎস্য আড়তগুলোতে ইলিশের ছড়াছড়ি থাকার কথা। কিন্তু এ বছর তা দেখা যাচ্ছে না। এমন আকালের কারণে ১৮০০থকে২০০০ টাকা  প্রতি  কেজি মাছ, ৮শত গ্রাম থেকে ৯ শতগ্রাম মাছ বিক্রি হয় ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।  ৫শত গ্রাম ও ৬ শতগ্রাম বিক্রি হচ্ছে ১২০০থেকে ১৫০০ টাকা
তজুমদ্দিন দোকান ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেল বলে আমরা প্রতিদিন জেলেদের বাকীতে তেল চাল সহ বিভিন্ন সদাই দেই কিন্তু জেলেরা মাছ না পাওয়াতে আমাদের টাকা দিতে পারছে না। এতে আমাদের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে।
শশীগন্জ  মাছ ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন জানান,আমরা তজুমদ্দিন থেকে ইলিছ মাছ ক্রয় করে লঞ্চ ও ট্রাক যোগে ঢাকা কারন বাজার, রামপুরা,যাত্রাবাড়ি বিক্রয় জন্য নিয়ে যায়। এই সময় মাছ না থাকায়
আমাদের ব্যবসার মারাত্মক  সমস্যা হচ্ছে। ঢাকা বিভিন্ন আড়ত থেকে সিজনের প্রথমে টাকায় এনেছি। এখন ঢাকাতে মাছ পাঠাতে পারতেছি না
ঢাকা থেকে আড়তদার ফোন দিচ্ছে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য।
তজুমদ্দিন বরফ কলের  ম্যানেজার সেলিম জানান, জেলেরা বরফ কিনতে না এলেও বরফ উৎপাদনের জন্য ইঞ্জিন সব সময় চালু রাখতে হয়। এ কারণে বরফ বিক্রি না থাকলেও বিদ্যুৎ বিল এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তজুমদ্দিন মৎস্য  আড়ত সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম মহাজন বলেন, বিগত বছর এই সময় নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যেত, কিন্তু এ সময় মাছ না থাকার আড়তদার  দিশেহারা হয়ে পড়ছে। মৌসুমীর প্রথমে জেলেদেরকে ব্যাংক থেকে অথবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছে,। সেই টাকার কিস্তি দিতে না পেরে অনেক আড়দার মানবতা দিন পার করছে।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন