লালমনিরহাটের শহীদ শাহিনুরের বাবা-মায়ের কাঁন্না দেখে প্রতিবেশীরাও কাঁদে
লালমিনরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের শহীদ শাহিনুরের বাবা – মায়ের কাঁন্না দেখে কাঁদে প্রতিবাসীরাও।
জানা গেছে,
শাহিনুর আলম, পেশায় একজন অটো রিকশা চালক। ৪ সদস্যর ছোট একটি পরিবার। ঢাকা শহরে সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করতো তাদিয়ে ছোট বোনকে মাদ্রাসা পড়ানো, মায়ের ঔষধ কেনাসহ সংসার চালানো মুল দায়িত্ব ছিল তার। পাশাপাশি স্বপ্ন দেখতেন, বসতভিটার জমি কিনে বাবা-মাকে স্বপ্নের একটি বাড়ি উপহার দেয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পুরণ হয়নি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শাহিনুর । এসব কথা বলছে আর কাঁদছে শহীদ শাহীনুরের বাবা ও মা। তাদের কাঁন্না দেখে প্রতিবেশীরাও কাঁদে। এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া থামছে না।
জানা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের বড় বাসুরিয়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল জব্বার ও মাছিরন বেগমের ছেলে শাহিনুর আলম। খাস জমিতে ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে সহ ৭ সদস্যর পরিবারটির বসবাস। ভাই-বোনদের মধ্যে ৩য় সন্তান শাহিনুর আলম। তার বড় ২ ভাই মাজেদুল ও সাইদুল ২ জনেই অটো রিক্সাচালক। বিয়ে করে তারা সংসার আলাদা করেছে। ২ বোনের মধ্যে ১বোন মাজেদার বিয়ে হয়েছে। ছোট বোন মারুফা পড়াশোনা করছেন । শাহিনুরও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন।
কয়েক বছর আগেও ৭ সদস্যর পরিবারটি হয়ে যায় ৪ সদস্যর পরিবার। শহীদ শাহিনুরের বাবা দিনমজুর আব্দুল জব্বার বৃদ্ধ । তেমন কাজকর্ম করতে না পাড়ায় পারিবারিক অভাব-অনআটন দেখা দেয়ায় ২০২৩ সালে লেখা পড়া বাদ দিয়ে লালমনিরহাট থেকে রাজধানী ঢাকায় ছুটে যান শাহিনুর। পড়াশোনা বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় রিকশা চালাতেন। এতে যা উপার্জন হতো তা বাবার কাছে পাঠিয়ে দিতো। ছোট বোনকে মাদ্রাসা পড়ানো, মায়ের ঔষধ কেনা ও সংসারে খরচ চলতো। পাশাপাশি স্বপ্ন ছিল নিজের টাকায় বসতঃ বাড়ী গড়ে তুলবে। কিন্তু বিধিবাম পুলিশের গুলিতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে।
শাহিনুর আলমের পরিবার জানান, চলতি বছরের ৬ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখ সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার লালবাগ থানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহিনুর। এমতাবস্থায় চলছিল থানার সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিল। সে মিছিলে যোগ দেন শাহিনুর। সেই মিছিলে পুলিশ অতর্কিতভাবে গুলি চালায়। ওই গুলি লেগে শাহিনুর রাস্তায় লুটে পরে যায়। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ নিজ বাড়ি লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের খেদাবাগের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। অন্যদিকে ছেলেকে হারিয়ে মা শোকে পাগল প্রায়। এখন তার প্রতিনিয়ত চিকিৎসা করতে হচ্ছে। তবে বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক উপমন্ত্রী ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু ৭০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। এদিকে এখন পর্যন্ত অনেকেই বাড়িতে আসে খোঁজখবর নিলেও কেউ কোন আর্থিক সাহায্য দেয়নি। শহীদ শাহিনুরের নামে নামকরণ করা হয়েছে একটি সড়ক।
শাহিনুর আলমের বাবা আব্দুল জব্বার জানান, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আমার ছেলে সহ অনেকেই শহীদ হয়েছে। পারিবারিক অভাব-অনআটনের কারণে পড়াশোনা বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় রিকশা চালাতেন। এতে যা উপার্জন হতো তা পাঠিয়ে দিতো। আমার অনেক বয়স হয়ে গেছে। এখন তেমন কাজকর্ম করতে পারি না। এখন কে চালাবে সংসার? একদিকে অভাব অন্যদিকে ছেলে হারানো শোক। পরিবার টি অতি কষ্ট ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
শাহিনুর আলমের মা মাছিরন বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে জানান, আমার সংসারের খরচ এখন কে চালাবে? তার ছেলেকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে তাদের সঠিক বিচারের দাবী জানান।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে সরকার তাদের অর্থ সহযোগীতা করছে। আমরা খোঁজখবর নিয়ে শাহিনুরের পরিবারকেও সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা নিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো।