মঙ্গলবার, ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

পাঁচবিবিতে জমির দাতা খোদাবক্স স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু

পাঁচবিবিতে জমির দাতা খোদাবক্স স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: প্রায় ৭০ বছর পর অবশেষে আওয়ামী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ভেদ করে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে জমির দাতা খোদা বক্সের নামে উপজেলা স্টেডিয়ামের নামকরন করা হলো। যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তদানিন্তন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতারা ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নামকরন করেছিলেন।
জানা যায়, ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর সম্প্রতি পাঁচবিবি উপজেলা শহরে অবস্থিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের পরিবর্তে ‘খোদাবক্স স্টেডিয়াম’ নামকরন হওয়াই সন্তুষ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে আরো জানা গেছে, পাঁচবিবি উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বর্তমান উপজেলা সড়ক এলাকার বিশিষ্ট দানবীর বলে পরিচিত ছিলেন প্রয়াত খোদাবক্স । প্রায় ৭০ বছর আগে সম্পদশালী খোদা বক্স তার জীবদ্দশায় এলাকার উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মে বেশ নিবেদিত ছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি খেলার মাঠের (বর্তমান স্টেডিয়াম) জন্য ২৭৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ জমি সে সময়ের গন্যমান্য ব্যক্তিদের বৈঠকে মৌখিক দানপত্র করে দেন। এ ছাড়াও বর্তমানে ডাকবাংলো, ঈদগাহ মাঠ, মসজিদ ও সে সময়ের সরকারি অফিস স্থাপনের জন্য বিপুল পরিমান সম্পত্তি দান করে গেছেন।
একই এলাকার সাবেক ক্রিকেটার ডন দাস, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও ব্যাংকার রুহুল আমীন, পাঁচবিবি প্রেসক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীবসহ এলাকার বিশিষ্টজনরা জানান, এলাকার উন্নয়নের কথা ভেবে খোদা বক্স উল্লেখিত সম্পত্তিই শুধু দান করেননি, তিনি ক্রীড়া, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে বেশ ভূমিকা রেখে গেছেন। কিন্তু বারবার সরকার বদল হলেও উত্তরাঞ্চলের কৃতি সন্তান খোদা বক্সের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তেমন কেউ এগিয়ে আসেনি।
এরপর আবার ২০১৬-২০১৭ সালের দিকে অতি উৎসাহী আওয়ালীগের জনপ্রতিনিধিরা খোদা বক্সের দান করা সম্পত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত  স্টেডিয়ামের  নামকরন করেন শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়াম। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি।
স্থানীয় সমাজকর্মী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, পাঁচবিবি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোযাফফর রহমান সাজা ও পাঁচবিবি প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক (অব:) আজাদ আলী জানান, এর আগে বিগত সরকারের আমলে  স্টেডিয়ামটির ভবনে শেখ রাসেল লেখা ছিল এবং মূল ফটকে ‘পাঁচবিবি ষ্টেডিয়াম লেখা ছিল। যদি খোদাবক্সের নামে প্রয়োজনীয় দলিল ও কাগজ পত্র থাকে, আর তিনি যদি মৌখিক দানপত্রও করে থাকেন এবং উক্ত সম্পত্তির কোন বৈধ্য রেজিষ্ট্রি না থাকে তাহলে ষ্টেডিয়ামটির খোদাবক্স নামকরনে অনুমোদন দিতে সরকারের কাছে জোর জানান তারা।
খোদা বক্সের ছেলে আলতাফ হোসেন খোকন ক্ষু্ব্ধ কন্ঠে ব্যাঙ্গাত্মক উক্তি করে বলেন, “দাতা বা তার ছেলে-মেয়ের নামে প্রতিষ্ঠানের নাম করন হতে পারে। আমাদের ৭ ভাই ও ২ বোনের তালিকায় তো বাপু শেখ হাসিনা আর শেখ রাসেল এর নাম নাই। তাহলে তারা আমার বাবা’র কোন পক্ষের (স্ত্রীর)সন্তান ?
খোদা বক্সের দুই নাতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব বুলু এবং চিত্র, ভাষ্কর ও কন্ঠ শিল্পী এম আই মিঠু জানান, তাদের দাদা  স্টেডিয়ামের ওই সম্পত্তির দাতা হলেও শেখ রাসেলের নামে স্টেডিয়ামের নাম করা হয়েছিল ক্ষমতার জোরে। ‘২০১৬-১৭ অর্থ বছরে  স্টেডিয়ামটির  একটি ভবনের দুইটি টয়লেট কাম বাথরুম নির্মানের জন্য অওয়ামীলীগ সরকার মাত্র ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। সেই কারনে কোনো প্রকার প্রজ্ঞাপন বা আদেশ ছাড়াই স্থানীয় আওয়ামীলীগের জনপ্রতিনিধি ও নেতারা তাদের স্মৃতি বিচরিত “পাঁচবিবি স্টেডিয়ামকে” শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম ঘোষণা দেয় । অবশেষে সম্প্রতি  দীর্ঘ দিন পর হলেও নামের স্বীকৃতি পাওয়ায় আত্মতৃপ্ত বলে জানান খোদাবক্স বংশধররা।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন