ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : আজ ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলন সূচনার দিন। দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (৭ জুন) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২-এ এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। পরে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষে প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
১৯৬৬ সালের এদিন বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়। এর মধ্য দিয়ে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা। ছয় দফাভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ছয় দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে ছয় দফাকে স্থান দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধ উপেক্ষা করে ছয় দফার প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব না দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ওই সম্মেলনে আর যোগ দেননি। তবে লাহোরে অবস্থানকালেই ছয় দফা উত্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু।
এর মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের খবরের কাগজে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা আখ্যা দিয়ে সংবাদ ছাপানো হয়। পরে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় ফিরে ১৩ মার্চ ছয় দফা এবং দলের অন্যান্য বিস্তারিত কর্মসূচি দলের কার্যনির্বাহী সংসদে পাস করিয়ে নেন।
ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শুরু হয় আওয়ামী লীগের আন্দোলন। হরতালও ডাকা হয়। হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলিবর্ষণ করে। এতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন।
ক্রমেই ছয় দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন তৈরি হয়। জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের। বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের নেতৃত্বাধীন স্বৈরাচারী সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। ছয় দফাভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।
সর্বোপরি ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে একচেটিয়া রায় দেন। জনগণ বিজয়ী করলেও স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
ছয় দফার মূল বক্তব্য ছিল—প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সব ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি পৃথক ও সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর ও শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপনের দাবি জানানো হয়।