শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

চালক ও চার যাত্রী নিয়ে আটলান্টিকে নিখোঁজ ‌টাইটানের আদ্যোপান্ত

চালক ও চার যাত্রী নিয়ে আটলান্টিকে নিখোঁজ ‌টাইটানের আদ্যোপান্ত

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক: উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে পর্যটকদের পানির সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে ডুব দেওয়া ডুবোযান টাইটানের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। গত রোববার সাগরের তলদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পর এই ডুবোযানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ডুবোযানটিতে রয়েছেন একজন চালক ও চারজন যাত্রী।

 

সাগরে ডুব দেওয়ার জন্য টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ বরাবর পানির ওপর নিয়ে যাওয়া মাদারশিপ পোলার প্রিন্সের গবেষকদের সঙ্গে টাইটাইনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ডুব দেওয়ার পরপরই।
টাইটানে অক্সিজেন রয়েছে সীমিত। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালের দিকেই টাইটানে অক্সিজেন সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাগরের বিশাল এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালানোর সময় বিশেষ এক ধরনের শব্দ শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এই শব্দ কোথা থেকে আসছে বা এর মানে কী তা এখনও জানা যায়নি।

 

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ফ্রান্সের বিভিন্ন সংস্থা ডুবোজাহাজটি শনাক্ত করার জন্য একসাথে কাজ করছে। টাইটানের মালিক সংস্থা ওশানগেট বলেছে, ডুবোযানটি নিরাপদে উদ্ধারের জন্য সম্ভাব্য সব বিকল্পের ব্যবহার করছে তারা।

 

টাইটানের খোঁজের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে…

 

• তল্লাশি অভিযানের সর্বশেষ তথ্য

 

অনুসন্ধানকারী কানাডার একটি বিমান পানির তলদেশে এক ধরনের শব্দ শনাক্ত করেছে। গভীর-সমুদ্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্য-উপাত্ত না দেখে এই শব্দ কীসের হতে পারে তা নির্ধারণ করা কঠিন।

 

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ বরাবর পানির ওপর নিয়ে যাওয়া জাহাজ মাদারশিপ পোলার প্রিন্স

তবে সাগরের তলদেশে সংক্ষিপ্ত, তীক্ষ্ণ, অপেক্ষাকৃত উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ হতে পারে। আর এই শব্দ ডুবোযানের ভেতরের কোনো শক্ত বস্তুতে আঘাতের মাধ্যমে তৈরি হয়। মার্কিন কোস্ট গার্ড ওই এলাকায় সমুদ্রের তলদেশে অনুসন্ধান চালানোর জন্য স্বয়ংক্রিয় যান পাঠিয়েছে।

 

কিছু বিমান আকাশ থেকে টাইটানের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাগরের তলদেশ থেকে ভেসে ওঠার পর কোনও কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে যাতে তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারে, সেজন্য বিমান মোতায়েন করেছে।

 

গভীর সমুদ্রের নিচে তল্লাশি চালাতে সক্ষম রোবটসহ একটি ফরাসি জাহাজ স্থানীয় সময় বুধবার বিকালের মধ্যে ওই এলাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

 

• টাইটানের ভাগ্যে কী ঘটতে পারে?

 

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালিস্টার গ্রেইগ বলেছেন, একটি বড় সমস্যা হলো— উদ্ধারকারীরা জানেন না যে, সমুদ্রপৃষ্ঠ নাকি সমুদ্রতলে খোঁজ করবেন। তবে এই দুয়ের মাঝে থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

 

তিনি কয়েকটি পরিস্থিতিতে কাজ করেছেন। জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে ডুবোযান ‘ড্রপ ওয়েট’ ছেড়ে দেয়, যাতে তা সমুদ্রপৃষ্ঠে ভেসে ওঠে।

 

লন্ডনের এই অধ্যাপক বলেন, যদি বিদ্যুৎ বিপর্যয় অথবা যোগাযোগে বিপর্যয় ঘটে, তাহলে ডুবোযানটির খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা সমুদ্রপৃষ্ঠে বেশি হবে। আরেকটি সম্ভাবনা হলো কোনোকিছুর সাথে ধাক্কা খাওয়ার ফলে ফুটো হয়ে যাওয়া। আর সেটি ঘটে থাকলে এর ফল ভালো হবে না।

 

আটলান্টিক মহাসাগরের সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে রয়েছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ

 

• কত গভীরে যেতে পারে টাইটান?

 

আটলান্টিক মহাসাগরের পৃষ্ঠ থেকে সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে রয়েছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। যদি ডুবোযানটি সমুদ্রতলে চলে যায় এবং নিজস্ব সক্ষমতার ব্যবহার করে ফিরে আসতে না পারে, তাহলে এটিকে উদ্ধারের বিকল্প অত্যন্ত সীমিত।

 

সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালিস্টার গ্রেইগ বলেন, আমরা জানি এত গভীরে যাওয়ার মতো যান খুব কমই আছে। সাবমেরিন উদ্ধারের জন্য নৌবাহিনীর নকশা করা যানবাহন যতটা প্রয়োজন ততটা গভীরে যেতে পারে না।

 

ডুবোযানটির মালিকানাধীন কোম্পানি ওশানগেটের মতে, টাইটান পৃথিবীর মাত্র পাঁচটি মনুষ্যবাহী ডুবোজাহাজের একটি; যা প্রয়োজনীয় গভীরতায় পৌঁছাতে সক্ষম।

 

মার্কিন নৌবাহিনীর একটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত রোবোটিক যান রয়েছে, যা ওই গভীরতায় কাজ করতে পারে। গত বছর দক্ষিণ চীন সাগরের ১২ হাজার ৪০০ ফুট গভীরতায় তল্লাশি চালিয়ে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের অবস্থান শনাক্ত ও উদ্ধারে ব্যবহার করা হয় এই যান।

 

• টাইটানের যাত্রী কারা?

 

এই ডুবোযানে আছেন মোট পাঁচজন যাত্রী।

 

>> ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ ধনকুবের ও বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং।

 

>> পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি এংরো করপোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯)।

 

>> ৭৭ বছর বয়সী ফরাসী পর্যটক পল অঁরি নারজিলেটও আছেন। পানির নিচে তল্লাশি চালাতে সিদ্ধহস্ত ফরাসী নৌবাহিনীর সাবেক এই কমান্ডার। যার ডাকনাম ‘মিস্টার টাইটানিক’।

 

>> যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিখোঁজ ডুবোযানটির মালিকানাধীন কোম্পানি ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশও (৬১) আছেন।

 

সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাইটানের যাত্রীদের জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে

 

• একবারের অভিযানে খরচ কত?

 

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে আট দিনের এক অভিযানে যাত্রীদের কাছ থেকে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার নেয় ওশানগেট।

 

কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের অবস্থান। দুই ভাগে টাইটানিকের সামনের এবং পেছনের অংশের অবস্থানের দূরত্ব প্রায় ২ হাজার ৬০০ ফুট। ভাঙা এই জাহাজ ঘিরে রয়েছে বিশাল ধ্বংসস্তূপ।

 

ধ্বংসাবশেষের কাছে পৌঁছানো, ঘুরে দেখা এবং ফিরে আসার এক অভিযানে প্রায় ৮ ঘণ্টা সময়ের দরকার হয়। ওশানগেটের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, টাইটানের উদ্বোধনী ডুব শুরু হয়েছিল ২০২১ সালে।

 

• ভিডিও গেম কন্ট্রোলারে নিয়ন্ত্রিত?

 

টাইটান অত্যন্ত ছোট এবং সরু একটি ডুবোযান। সাড়ে ২২ ফুট দীর্ঘ, ৯ দশমিক ২ ফুট ব্যাস এবং ৮ দশমিক ৩ ফুট উচ্চতার টাইটান মাত্র পাঁচজনকে পরিবহন করতে পারে। তাদের একজন পাইলট এবং চারজন যাত্রী। এর ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা নেই। খালি পায়ে মেঝেতে বসার ব্যবস্থা রয়েছে।

 

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে ডুবুরিদের নিয়ে যাওয়া ছাড়াও সেখানে জরিপ, পরিদর্শন, গবেষণা এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, ভিডিও ধারণসহ অন্যান্য কাজ করে টাইটান।

 

কোম্পানির মতে, টাইটান অত্যাধুনিক আলো এবং সোনার নেভিগেশন সিস্টেমের সাথে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে ফোর-কে ভিডিও এবং ফটোগ্রাফিক সরঞ্জামে সজ্জিত। বিবিসির মার্কিন সহযোগী সংবাদমাধ্যম সিবিএস গত বছর টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য তাদের একজন সাংবাদিককে এই সংস্থাটির মাধ্যমে সমুদ্রযাত্রায় পাঠিয়েছিল।

 

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে পৌঁছানো, ঘুরে দেখা এবং ফিরে আসার এক অভিযানে প্রায় ৮ ঘণ্টা সময়ের দরকার হয়।

 

ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ তাকে টাইটান ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি জানিয়েছিলেন, ডুবোযানটির ভেতরে কেবল একটি বোতাম রয়েছে এবং একটি ভিডিও গেম কন্ট্রোলার ব্যবহার করে তা পরিচালনা করা হয়।

 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিবিএসের প্রতিবেদনে যে টাইটানের কথা বলা হয়েছে, তা পুরোনো মডেলের বলে মনে হচ্ছে।

 

• নিখোঁজ হলো কখন?

 

রোববার সকালের দিকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছাকাছি যায় পোলার প্রিন্স। স্থানীয় সময় রোববার ৮টায় ধ্বংসাবশেষের উদ্দশে ডুব দেয় এটি। বিকেল ৩টার মধ্যে ফিরে আসার কথা ছিল টাইটানের। কিন্তু যাত্রা শুরুর পর ৯টা ৪৫ মিনিটে টাইটানের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

 

মার্কিন কোস্ট গার্ড বলেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ৮ ঘণ্টা পর অর্থাৎ বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে তারা এই ঘটনা সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারেন। তারপর বোস্টনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধান প্রচেষ্টার সমন্বয় কার্যক্রম শুরু হয়।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন