‘আগুনে আমার ঘরবাড়ির সঙ্গে সংসারটাও পুড়ে গেছে’
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : প্রতিদিনের মতো রাতে দিনমজুর ফজলু মন্ডল ও তার স্ত্রী নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখেন আগুনের লেলিহান শিখায় দাউ দাউ করে জ্বলছে তার ঘর। কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে দুজনে ঘর থেকে বের হয়ে পাড়া প্রতিবেশীর সহায়তায় ঘণ্টা খানেকের প্রচেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হন। ততক্ষণে তার সব পুড়ে গেছে।
গত বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) তার বাড়িতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা ঘটেছে কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের।।নং ওয়ার্ডের খালকুলা গ্রামের আনারুল মন্ডলের ছেলে ফজলু মন্ডলের বসতবাড়িতে। অভাব অনটনের সংসারে মাটি ও টিনের তৈরি দুই ঘরে থাকা সংসারের খুঁটিনাটি জিনিসপত্র সব কিছুই পুড়ে গেছে । আগের দিন কেনা এক বস্তা চালও পুড়েছে আগুনে। দুজনের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তারা। প্রতিবেশী সোহাগ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, ৩ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার কোনো রকমে চলছিল। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শুধু স্বামী-স্ত্রী থাকেন বাড়িতে। বৈদ্যুতিক শটসার্কিটে বাড়িতে আগুন লেগেছে বলে সকলে ধারণা করছেন। শীতের সময়ে থাকা খাওয়ার কষ্টের কথা চিন্তা করে ফজলু মন্ডল স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর তিনি পাশেই ছোট চটে মোড়ানো খুপরি একটা রান্না ঘরে কনকনে এই শীতে কোনরকমে রাত কাটাচ্ছেন। পাড়া প্রতিবেশীর দেওয়া খাবারে মেটাচ্ছেন পেটের ক্ষুধা। অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনার ৬ দিন পার হলেও নতুন করে পুনরায় ঘর নির্মাণের অর্থ না থাকায় পোড়া ঘর বাড়ি ওই অবস্থায় পড়ে আছে তার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজের সামর্থ্যবান কেউই অসহায় ফজলুর পাশে এসে দাঁড়াননি। প্রত্যক্ষদর্শী ইতিকা মজুমদার ঢাকা পোস্টকে জানান, বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারের বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে শুনি ভেদুর বাড়ি আগুন ধরেছে। তড়িঘড়ি করে উঠে সবাই মিলে আগুন নেভাতে নেভাতে সব শেষ। ফজলু ভাই খুব গরিব। সমাজের বিত্তবান মানুষের উচিত অসহায় এই মানুষের পাশে দাঁড়ানো। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ফজলু মন্ডলের বাড়ি যেয়ে দেখা যায়, তিনি রান্নাঘরে একটি কাঠের তৈরি খাটের ওপর শুয়ে আছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগুনে আমার ঘরবাড়ির সঙ্গে সংসারটাও পুড়ে গেছে। নতুন করে ঘর নির্মাণ করার সামর্থ্য আমার নেই। আমি কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধাও পায় না। এই ঘটনার দিন শুধুমাত্র উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী ভাই আমাকে ৩ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়েই খাট, লেপ ও একটি লুঙ্গি কিনেছি। আর কোনো সাহায্য সহযোগিতা কারো থেকে পাইনি। ঘর নির্মাণে আমি সকলের সহযোগিতা চাই। কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শুনে আমি গিয়েছিলাম তার বাড়িতে। আমি তাকে ব্যক্তিগত ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। অসহায় এই মানুষটির পাশে দাঁড়াতে সমাজের সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানাযই। দশের লাঠি একের বোঝা- এই প্রবাদ বাক্যটি যদি ফজলুর ক্ষেত্রে সমাজের মানবিক মানুষগুলো প্রয়োগ করে তাহলে হয়তো আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে সে।