রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

ঈদের আনন্দ নেই বেইলি রোডে আগুনে নিহত কলাপাড়ার জুয়েল রানার দুই সন্তানের

ঈদের আনন্দ নেই বেইলি রোডে আগুনে নিহত কলাপাড়ার জুয়েল রানার দুই সন্তানের

মিলন কর্মকার রাজু,  কলাপাড়া।।

কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে  বেইলি রোডের আগুনে  নিহত পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জুয়েল রানার আশির্ধো বৃদ্ধ বাবা ইসমাইল গাজীর। সামনে ঈদ।   ছোট নাতি নাতনির জন্য এখনও নতুন জামা কাপড় কিনতে পারেননি । ঘরেও খাবার বাড়ন্ত।  এই বয়সে কোন কাজ নেই, তাই প্রখর রোদের মধ্যে  দুই নাতি নাতনি কে নিয়ে  ছেলে জুয়েলের কবর পরিষ্কার করছে সে।  ওর বাবা কখন ঘুম থেকে উঠবে জানতে চাইছে জুয়েলের  ছোট্ট ছেলে তাহমিদ। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে তার বোন তাসমিম।

সোমবার সকালে  কলাপাড়ার  মধুখালী গ্রামের জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে  চোখে পড়ে দৃশ্য।  ঈদ যে পরিবারে স্বজনদের ভীরে  থাকতো কোলাহল মুখর,  সে বাড়িতে আজ সুনশান  নীরবতা। আর ছোট ছেলেমেয়ে, অসুস্থ বৃদ্ধ শশুর শাশুড়িকে নিয়ে  ঘরের কোণে বসে চোখের জল ফেলছে  নিহত জুয়েলের স্ত্রী।

 

গত ঈদেও  বাবা-মাকে  নতুন জামা কাপড় ও সন্তানদের দিয়েছিল  চাহিদা মত পোশাক।  স্ত্রীকেও দিয়েছিল নতুন  কাপড়।  অথচ এ বছর  ঈদের একদিন আগেও এ পরিবারের সবার আদরের সন্তান তাসনিম ও তাহমিদের জন্য কিছুই কেনা হয়নি।  এ কারণে নতুন পোশাকের জন্য  বারবার বায়না ধরছে  আট বছরের তাসমিম। একটু পর পর মাকে জড়িয়ে ধরে বলছে,আব্বা বলেছিল এ বছর ঈদে লেহেঙ্গা নতুন জুতা,লিপস্টিক  দিবে।  আমার জন্য কিনবা কবে।  কিন্তু যেই ঘরে  এখন শুধুই অন্ধকার ঈদের সকালে এই ঘরের শিশুদের মুখে হাসি ফুটবে কিভাবে এই চিন্তায় চোখের জল ফেলছেনিহত জুয়েলের স্ত্রী।  প্রশাসন ও স্থানীয়ভাবে কিছু সহায়তা পেলেও  সবাই ভুলতে বসেছে  জুয়েলের পরিবারকে।

 

জুয়েলের বৃদ্ধ বাবা-মা জানায়, কিভাবে এখন সংসার চলবে, কিভাবে শিশুদের খাবারদাবার ও  তাদের নতুন পোশাক দিব  তার কোন উপায় নেই।  বৃদ্ধ বয়সে কেউ কাজও দিতে চায় না। তাই জানিনা ঈদের দিন কি হবে।

 

আর আট শিশু বছরের তাসমিম জানায়, আব্বায় বলেছিলো এবার ঈদে আমাকে লেহেঙ্গা, নতুন জুতা, ভাইকেও নতুন সবাই কিনে দেবে। কিন্তু আব্বার তো নাই,  আর কেউ দেয়ারও নেই।

 

আর ছেলের মৃত্যুর পর  যেন নানা রোগ বাসা বেধেছে জুয়েলের বৃদ্ধ মা ফাতেমা বেগমের শরীরে। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে সে শয্যাশায়ী।  লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।  গত বছর ছেলে চিকিৎসা করিয়েছিল,  কিন্তু এবছর  তাকে রেখেই চলে গেছে পরিবারের একমাত্র সম্বল জুয়েল।  ছেলের মৃত্যুর পর  কাঁদতে কাঁদতে  তার চোখের জলও  শুকিয়ে গেছে।

 

আর জুয়েলের স্ত্রী রেবা আক্তার বলেন, ছেলে মেয়েদের আবদার কিভাবে মেটাবো। ওরা তো সকাল বিকাল আবদার করে।  মুখ লুকিয়ে কান্না ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমার। ঘরে ঈদে বাচ্চাদের মুখে কি দেব  সে উপায়ও নেই।

 

আর প্রতিবেশীরা বলেন, এ পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা না করলে  ছোট দুটি সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার থেকে যাবে।

 

কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মেজবা উদ্দিন খান দুলাল বলেন, এপরিবারটি এখন খুবই অসহায় । পরিষদের পক্ষ থেকে ও ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন