লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের গুচ্ছগ্রামে ধস চলে গেছে ৮২ টি অসহায় পরিবার
মোঃ লাভলু শেখ
লালমনিরহাট থেকে।।
লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রামের গুচ্ছ গ্রামে মাটিতে ধস। অন্যএে চলে গেছে ৮২ টি ভূমিহীন পরিবার।
জানা গেছে,
ভূমিহীন, গৃহহীন, নদী ভাঙনের শিকার দরিদ্র পরিবারের জন্য নির্মিত গুচ্ছগ্রামে ধসের কারণে ঘরের মাটি সরে গিয়ে দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির বেহাল দশা হওয়ায় দহগ্রামের গুচ্ছগ্রাম থেকে চলে গেছে ৮২ টি পরিবার। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে আছে ৪৮ পরিবার।
ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশি আলোচিত ভূ-খন্ড দহগ্রাম ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরে ২০১৮ সালে নির্মিত করা হয় দহগ্রাম-১ গুচ্ছগ্রাম। ৩-ধাপে এখানে ১৩০ টি বসতঘর নির্মাণ করে পর্যায়ক্রমে ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু গত ২-৩ বছরের বর্ষা ও বন্যায় এ গুচ্ছগ্রামের ঘরের মাটি ও মেঝে ধসে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পরে। এখানকার বাসিন্দারা অস্বচ্ছল হওয়ায় ধসে যাওয়া ঘর মেরামত করতে না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে চলে গেছে অন্যএে। অপরদিকে এ গুচ্ছগ্রামে চলাচলের একমাত্র সড়কটি খানা খন্দে পরিনত হয়েছে। ধুলো-বালির সড়ক হওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার হয়েও গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন অনেকে। বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওই ইউনিয়নের তিস্তা নদী অববাহিকার বড়বাড়ি এলাকায় ২০১৮ সালে গুচ্ছগ্রাম ২য় পর্যায়ে ক্লাইমেট ভিকটিমস্ রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট (সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় ৩-ধাপে ১৩০ টি বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়। বাড়ি গুলোতে ভূমিহীন, গৃহহীন, নদী ভাঙনের শিকার দরিদ্র পরিবারকে খাস জমিতে পূর্ণবাসনের লক্ষ্যে সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়। নির্মাণের পর থেকে এ গুচ্ছগ্রামে পূর্ণবাসিত পরিবার গুলো যাতায়াতের সড়কের কারণে নিত্যদিন দুর্ভোগে পরে। কিছুদিন পর তিস্তা নদীর বন্যা ও বৃষ্টিতে এখানকার মাটি ধসে যায়। এতে বেশির ভাগ ঘরের মেঝে, স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে এখানে বসবাসে কষ্ট হয়ে পরে বাসিন্দারা। পাশাপাশি এ গুচ্ছগ্রামে যেতে দহগ্রামের নয়ারহাটগামী পাকা রাস্তা হতে প্রায় ২ কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি বৃষ্টি, বন্যা, খড়া/শুষ্কসহ সব মৌসুমে চলাচলে অনুপযোগী। সড়কে থাকা একটি কালভার্টও ঝুকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। এতে বেশ কষ্টে চলাচল করে এখানকার বাসিন্দারা। গুচ্ছগ্রামটিতে ঘর বরাদ্দ পাওয়া পরিবার গুলো অস্বচ্ছল ও দিনমজুর হওয়ায় কাজের সন্ধানে যাওয়া-আসায়ও দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। দীর্ঘদিনেও একমাত্র চলাচলের সড়টির সংস্কার না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন এখানকার বাসিন্দারা। এখানে বসবাসরত পরিবার গুলোর সন্তানেরা পায়ে হেঁটে দূরের বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। নানামুখী সমস্যার কারণে গুচ্ছগ্রামের বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গেছে ৮২ টি পরিবার।
দহগ্রাম গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন (৪৮) জানান,নদী ভাঙনের শিকার হয়ে জমি, ‘বসতভিটা হারিয়ে এ গুচ্ছগ্রামে আসছি। এখানে থাকা কষ্টকর, কাম-কাজের জন্য এখানকার সড়ক দিয়ে বাইরে যাওয়া-আসা করা যায়না। এখানকার ঘর গুলোর মাটি ধসে যাওয়ায় অনেকে চলে গেছে।
এ গুচ্ছগ্রামের ১১ নম্বর ঘরের বাসিন্দা জুলেখা বেগম (৩০) জানান, কাজ না করলে তো আমাদের ভাত জোটেনা। গুচ্ছগ্রাম থেকে যাওয়া-আসার রাস্তার খুব সমস্যা। মাটি সরে গিয়ে ঘর গুলোতেও থাকা যায় না। এজন্য অনেকে চলে গেছে।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, ‘দহগ্রামের গুচ্ছগ্রামের সড়কের কারণে এখানে বসবাসকারীরা খুব কষ্টে আছে। অনেকে চলে গেছে। সড়কটি মেরামত করা জরুরী। আমি এ ব্যাপারে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি।’
এ ব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান জানান,‘সড়কের সমস্যার ব্যাপারে শুনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হবে। গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হওয়ায় অনেকে বাইরে চলে গেছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।