পার্বতীপুরে পল্লী বিদুতের লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত
সোহেল সানী: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে গ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রায় তিনগুণ। কোনো কোনো এলাকায় একটানা এক ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পার্বতীপুরের রামপুর ইউনিয়ন। যেখানে ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ মিলে ২/৩ ঘণ্টা। গ্রামের বাদল রহমান জানান, ঘণ্টা নয়, বিদ্যুৎ দেয় ৩০ মিনিট, লোডশেডিং হয় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। এভাবেই দিনরাতে ২/৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই। ধাপের বাজার এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: লুৎফর রহমান জানান, প্রায় এক মাস ধরেই এ অবস্থা। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের যন্ত্রণাও বাড়ে। অথচ পার্বতীপুরেই রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ৫২৫ মেগাওয়াটের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেওয়া তথ্যমতে, পার্বতীপুর উপজেলায় দিনে ২০ থেকে ২১ ঘণ্টা কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না। উপজেলায় ১৮টি ফিডারে বিদ্যুতের মোট গ্রাহক রয়েছেন ৭৫ হাজার। উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২ মেগাওয়াট। তার জায়গায় সরবরাহ পাচ্ছেন মাত্র ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেটা আবার জাতীয় গ্রিড থেকে ভায়া হয়ে পার্বতীপুর হলদীবাড়ী সাবস্টেশনে যুক্ত হয় বিদ্যুৎ। সেখান থেকে উপজেলার ১৮টি ফিডারে ভাগ করে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চন্ডিপুর, হাবড়া, বেলাইচন্ডি, পলাশবাড়ী, হরিরামপুর, হামিদপুর, মন্মথপুর, মোমিনপুর, মোস্তফাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনে কিছুটা সময় বিদ্যুৎ থাকলেও রাতের চিত্র ভয়াবহ। দিনরাত মিলিয়ে ৬ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে গিয়ে গভীর রাতে একবার এলেও তার স্থায়িত্ব আধা ঘন্টার বেশি হচ্ছে না। মোমিনপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজার এলাকার প্রদীপ কুমার রায় বলেন, দিনেও থাকেনা, রাতেও কারেন্ট থাকেনা। তাও যদি আসে আধা ঘন্টার মতো স্থায়ী। আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করছে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন। মন্মথপুর ইউনিয়নের নজেপাড়া গ্রামের সবুজ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, সারাদিন কাজকর্ম করিয়া রাইতোত এ্যানা ঘুমবার দ্যাওছেনা। এ্যাইলা জ¦ালা কার সয় কনঠো বাহে।
চন্ডিপুর ইউনিয়নের বছিরবানিয়া গ্রামের অটোরিকশা চালক মাহবুবুর রহমান বলেন, কারেন্ট না থাকায় বেশিরভাগ সময় গাড়ীতে চার্জ দিতে পারি না। সারা দিন পরিশ্রম করি। রাতে ঘুমাইতে গেলে দেখি কারেন্ট নাই। এভাবে কি জীবনযাপন করা সম্ভব! আজ মঙ্গলবার এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পার্বতীপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো: এহতেশামুল হক বলেন, উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২ মেগাওয়াট। তার জায়গায় সরবরাহ ৭৫ হাজার গ্রাহকের জন্য পাচ্ছি মাত্র ৪ মেগাওয়াট। সেই বিদ্যুৎ ১৮টি ফিডারে ভাগ করে দেওয়া হয়। অতিরিক্ত রোদে বিদ্যুতের তার গরম হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে।