পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষে হস্তান্তর।।
মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)।। পায়রা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স ড্রেজিং প্রকল্পটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। যা পায়রা বন্দর সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। এর মাধ্যমে পায়রা বন্দরের চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত হয়ে পায়রা বন্দর বর্তমানে দেশের গভীরতম বন্দরে রূপান্তরিত হয়েছে। এরফলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩২ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট প্যানামেক্স আকৃতির বড় জাহাজ ৪০ হাজার মেঃটন থেকে ৫০ হাজার মে. টন পণ্য নিয়ে সরাসরি পায়রা বন্দরে ভিড়তে পারবে। বন্দরের এই সক্ষমতার মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় মহান স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষে বেলজিয়ামের জানডিনুল কোম্পানী রাবনাবাদ চ্যানেল পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
পায়রা বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী মে মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল উদ্ভোধন করার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। টার্মিনালটি চালু হলে বন্দরের আমদানী-রফতানী কার্যক্রম বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং বন্দরের রাজস্ব আয় বাড়বে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখবে।
বন্দর চেয়ারম্যান আরো বলেন, চ্যানেলের নাব্যতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত হওয়ার ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট-এর মাধ্যমে খাদ্যশস্য, সার, আমদানিকৃত গাড়ী ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ নগরী ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে পণ্য পরিবহনে খরচ ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হবে।
তিনি বলেন, ড্রেজিং এর ফলে বড় বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে আনয়নপূর্বক আমদানী-রপ্তানী বৃদ্ধিকরতঃ দক্ষিণাঞ্চলকে অর্থনীতির মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং দেশের জিডিপি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
রাবনাবাদ চ্যানেল হস্তান্তর উপলক্ষে পায়রা বন্দরের সভাকক্ষে বন্দর কর্তৃক একটি প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, স্কিম পরিচালক কমডোর রাজীব ত্রিপুরা, জানডিনুল এর প্রকল্প পরিচালক ইয়ান মোয়েন্স, পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. মহিব্বুর রহমানসহ জানডিনুল ও পায়রা বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়িত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ড্রেজিং স্কিম ‘‘রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং’’ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বেলজিয়াম ভিত্তিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জানডিনুল (Jan De Nul) ড্রেজিং কাজটি সম্পন্ন করে।
বেলজিয়ামের জানডিনুল এর প্রকল্প পরিচালক ইয়ান মুয়েন্স বলেন, বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রার ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স ড্রেজিং এর কাজে সরাসরিভাবে যুক্ত হতে পারা জানডিনুল এর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তারা এই প্রকল্পে নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের চ্যানেল সাফলভাবে খনন শেষ করে আজ খুবই আনন্দিত। জানডিনুল আশা করে, এই সাফল্যের মাধ্যমে দু’দেশের সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মুহিব্বুর রহমান মুহিব বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিং শেষ হবার ফলে পায়রা বন্দর বিশ্বের একটি শ্রেষ্ঠ বন্দরে পরিনত হয়েছে। এই বন্দরের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে এবং মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে।
স্কিম পরিচালক কমডোর রাজীব ত্রিপুরা বলেন, এ ধরনের দীর্ঘ ৭৫ কি.মি. চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং বাস্তবায়নের পূর্বে দীর্ঘ কয়েক বছর স্টাডি ও সমীক্ষা করা হয়েছে। স্টাডি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেদারল্যান্ডের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান Royal Huskuning এবং CDR কর্তৃক বিশ্লেষণ করা হয়। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান HR Wallingford এর সিম্যুলেটরে Real Time Simulation এবং Underside Keel Clearance পরীক্ষা করে চূড়ান্তভাবে আন্তর্জাতিক মানের একটি চ্যানেল ডিজাইন করে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হয়। এই চ্যানেল ব্যবহার করে এখন অনায়াসেই বন্দরে প্যানামেক্স আকৃতির বৃহৎ জাহাজ বন্দরে চলাচল করতে সক্ষম হবে।
বন্দর চেয়ারম্যানরিয়াল এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল আরও বলেন, পায়রা বন্দর নির্মাণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে পায়রা বন্দর বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠছে পায়রা শিল্প নগরী, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রি, ডক ইয়ার্ড, বিমান বন্দর ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর কর্মসংস্থানের। তিনি আশা প্রকাশ করেন, খুব শীঘ্রই পায়রা বন্দর হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় ইকোনিক্যাল হাব।