নারী শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখছে জেলার প্রথম বেসরকারি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জমির উদ্দিন শাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
এস.এম.রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: নারী শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখায় সর্বমহলে প্রশংসিত দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পাকেরহাটে অবস্থিত জমির উদ্দিন শাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনাজপুর জেলার প্রথম বেসরকারি নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাকেরহাট জমির উদ্দিন শাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
সুনামধন্য ও মানসম্মত এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৩ সালে উপজেলার পাকেরহাট বাজারের পার্শ্বেই গোয়ালডিহি গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি মরহুম জমির উদ্দিন শাহ ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম গোলাম রহমান শাহসহ এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের দানকৃত জমিতে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আকবর আলী শাহ। তিনি পুরো উপজেলা জুড়ে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
জানা যায়, ১৯৮৩ সালে স্কুল শাখার কার্যক্রম শুরু হয় টিনশেড ভবনে তখন প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফয়েজ উদ্দিন। এরপরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ফজলুল হক। ১৯৯৪ সালে ঐ প্রতিষ্ঠানে কলেজ শাখা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাহ মো: জামাল উদ্দিন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী সংখ্যা ৬০৪ জন। এদের পাঠদানে কর্মরত রয়েছেন স্কুল ও কলেজ শাখার ২৭ জন শিক্ষক ও ১০ জন কর্মচারী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পাকেরহাট বাজারে আংগারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্বে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘুরে সুবিশাল এই ক্যাম্পাস। মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই পাকেরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পার হয়েই জমির উদ্দিন শাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন। শিক্ষার্থীর চেয়ে শ্রেণীকক্ষ সংকট থাকলেও অনুপযোগী দোতলা ভবন ও টিনশেড ভবন চলছে পাঠদান কার্যক্রম। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত পিটি-প্যারেড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গার্লস গাইড কার্যক্রম, বিজ্ঞান ল্যাবরেটরীসহ কো-কারিকুলাম কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এইচএসসি ফলাফলে চলতি বছরসহ বেশ কয়েকবার উপজেলার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জমির উদ্দিন শাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ২০২৩ সালে ১৩০ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা পাশের হার ৮৯.২৩% ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন। গত ২০২২ সালে ১৩৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার ৭৫% ও জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ জন ও ২০২১ সালে ১৬২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার ৯৪.৪৪% ও জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮ জন ছাত্রী। অন্যদিকে এসএসসি পরীক্ষাতেও এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে প্রশংসনীয় সাফল্য ও সুনাম।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি ও এইচএসসি অধ্যয়ন শেষে অনেকেই দেশ সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, নার্সিংসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়ন করে চাকুরী ও ব্যক্তি জীবনে সুনাম কুড়াচ্ছেন।
এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী ও এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নী চিকিৎসক ডা. মুনতাহেনা নুজহাত বলেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী সকলেই আন্তরিক। সকলের স্বদিচ্ছার ফলে এই প্রতিষ্ঠানে আনন্দমুখর পরিবেশে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজও আমাদের হৃদয়ে আছে।
অত্র প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহরিয়ার জামান শাহ নিপুণ বলেন, সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও সকলের সহযোগিতা জমির উদ্দিন শাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ আজ ভালো পর্যায়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে শিক্ষার মান আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে এইজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
ইউএনও মোঃ তাজ উদ্দিন বলেন, জমির উদ্দিন শাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ নারী শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সরকার পিছিয়ে পড়া নারীদের শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। সেই ধারাবাহিকতায় জমির উদ্দিন শাহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি ও শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে উপজেলা প্রশাসন সর্বদা পাশে থাকবে।