শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবারের করণীয়
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : শিশুর ব্যক্তিত্ব বলতে তার চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও আচরণকে বোঝায়। এর ভিত্তি মূলত ছোটবেলায় তৈরি হয়। এখানে পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ শিশু জন্মের পর পরিবারের সান্নিধ্য পায় সবচেয়ে বেশি। তারপর ধীরে ধীরে সামাজিক পরিবেশে পরিচিতি ঘটে। চলুন জেনে নেওয়া যাক শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে পরিবার কীভাবে অবদান রাখতে পারে-
১. শিশুর অংশগ্রহণ ও মতামত প্রদানে সাহায্য করা
শিশু একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি এটি পরিবারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সে ছোট হলেও তার নিজস্ব ভালো লাগা না লাগা, পছন্দ-অপছন্দ আছে। সুতরাং, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় শিশুর অংশগ্রহণ থাকা এবং যেকোনো কাজে শিশুকে সঙ্গে রাখা জরুরি। শিশুকে যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিতে হবে। যদি কোনো বিষয়ে তার ভুল হয়ে থাকে তাকে সংশোধন করে দেওয়া এবং তাকে কারণটা বুঝিয়ে বলা আপনার দায়িত্ব। পারিপাবরিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শিশু অনেক সময় তার নিজস্ব মতামত দিতে পারে। এতে করে তার সিদ্ধান্ত প্রদান এবং গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং সে হয়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসী।
২. শিশুকে বিভিন্ন খেলাধুলায় উৎসাহিত করা
শিশু যেন আনন্দের সঙ্গে খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সেজন্য তার বয়স অনুযায়ী খেলনা এবং খেলা নির্বাচন করতে হবে। বাজারে খেলনা কিনতে গেলে দেখবেন অনেক খেলনার গায়ে বয়স দেওয়া আছে, আপনার শিশুর বয়স অনুযায়ী খেলনা কিনবেন। এতে শিশু সহজে সেই খেলনা দিয়ে খেলতে পারবে এবং তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ভালো হবে।
৩. শিশুর জানার আগ্রহকে সম্মান করুন
শৈশবে শিশুর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার কৌতুহল থাকে। তারা অনেক প্রশ্ন করে, এতে করে অনেক বাবা-মা বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিরক্ত হন। এসব ক্ষেত্রে বিরক্ত না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গেসেসব প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে হবে। অনেক সময় শিশুরা জটিল এবং অদ্ভুত প্রশ্ন করে থাকে, যেসব প্রশ্নের উত্তর বড়রা ও জানেন না। সেক্ষেত্রেও রাগ না করে বা ভুল ব্যাখ্যা না দিয়ে তাকে বলুন আপনি তা জানেন না এবং সেটা জেনে জানানোর চেষ্টা করবেন।
৪. শিশুকে সততা এবং নৈতিকতা গঠনে সাহায্য করুন
একজন শিশুর সৎ ও নীতিবান হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। শিশুর সামনে কখনো মিথ্যা না বলা বা শিশুর সঙ্গে মিথ্যা না বলার অভ্যাস করতে হবে। শিশুকে কখনো মিথ্যা আশা দেয়া যাবে না। যেমন, আপনার শিশু হয়তো খেতে চাইছে না আপনি তখন তাকে বললেন সে যদি খেয়ে নেয় তাহলে তাকে আপনি খেলনা কিনে দেবেন বা ঘুরতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু আপনি পরবর্তীতে কথা রাখলেন না। এতে করে শিশু তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে এবং নিজেও এরকম শিখবে। শিশুদের সামনে অন্যায় কাজ করা যাবে না বা অন্যায় কাজকে সমর্থন দেয়া যাবে না। এতে শিশুর নৈতিক দিক উন্নত হবে।
৫. শিশুর যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা
শিশুদের সামনে সঠিক শব্দ ও ভাষা ব্যবহার করা খুব জরুরি। এতে করে তার যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। অন্যকে দুঃখ বা আঘাত দিয়ে কথা না বলে কীভাবে দৃঢ়ভাবে কথা বলতে হয় সে সেটা শিখবে।
৬. শিশুকে নিয়ম সেখান
পরিবার শিশুর প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিশুর নিয়মকানুন শেখার এখন থেকেই শুরু। একজন শিশুর কাছে তার পরিবার এবং সমাজ ঠিক কী ধরণের আচরণ প্রত্যাশা করে এবং কেন তা করে সেসব তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বিভিন্ন বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলুন। শিশু যখন প্রত্যাশিত আচরণ করবে তখন তাকে পুরষ্কৃত করতে হবে এবং সেইসব আচরণ যেন সে সবসময় করে সেজন্য তাকে উৎসাহিত করতে হবে। শিশুর যেকোনো ছোট অর্জনেও তাকে উৎসাহ এবং উদ্দীপনা জোগাতে হবে।
৭. শিশুর আবেগের মূল্য দিন
অনেক সময় শিশুও যেকোনো বিষয় নিয়ে হতাশায় থাকতে পারে। তখন পরিবারকে শিশুর পাশে থাকতে হবে। তার হতাশা বা উৎকণ্ঠার কারণ জেনে তাকে সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে হবে। শিশু এতে করে হতাশা কাটিয়ে উঠতে মনোবল ফিরে পাবে। সে অনুভব করবে সে এক নয়, তার খারাপ সময়ে তার কাছের মানুষেরা তার পাশেই আছে। ভবিষ্যতে সে তার নিজের সমস্যা নিজে সমাধানে উদ্যোগী হবে এবং অন্যদের বিপদেও সাহায্য করতে পারবে।
৮. শিশুদের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে উৎসাহ দিন
শিশু তার সহপাঠী, আত্মীয়, প্রতিবেশী সবার সঙ্গে যেন মিলেমিশে থাকতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বন্ধুদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়া, খেলনা শেয়ার করা এসব ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে তাকে শেখাতে পারেন। এতে তার মনোসামাজিক বিকাশ ভালো হবে। সফল এবং মজবুত পারিবারিক শিক্ষা শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।