শনিবার, ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

ব্যাংকারদের পক্ষে হাইকোর্টের রুল, চাকরিতে পুনর্বহালে ফের আবেদন

ব্যাংকারদের পক্ষে হাইকোর্টের রুল, চাকরিতে পুনর্বহালে ফের আবেদন

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : মহামারি করোনার সময় ছাঁটাই হওয়া ব্যাংকারদের পক্ষে রুল জা‌রি করেছেন হাইকোর্ট। তাই চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য ফের বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছেন চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংক কর্মীরা। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) চাকরি ফিরে পেতে বাংলা‌দেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকাররা।

এর আগে ২০২০ সালে মহামারি করোনার সময় খরচ কমানোর অজুহাতে কর্মী ছাঁটাই করে বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংক। আবার অনেককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এমন প‌রি‌স্থি‌তিতে ব্যাংক কর্মীদের ছাঁটাই বন্ধ ও করোনাকালে চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ব্যাংক কর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এ নির্দেশনা মানেনি ব্যাংকগুলো। তাই উপায় না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন চাকরিচ্যুতরা। বিষয়‌টি আমলে নিয়ে সম্প্রতি ব্যাংকারদের পক্ষে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করতে বলা হয়। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি ফিরে পেতে গভর্নরকে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকাররা। এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চাকরিহারা ব্যাংকাররা জানান, করোনা মহামারির ব্যাপকতা এবং লকডাউনের মতো বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের সময়ে কর্মী ছাঁটাই বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকা স্বত্বেও আমরা বহু সংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তা এখন অসহায়। কারণ তাদের কোনো কারণ ছাড়াই বেশ কিছু ব্যাংক হঠাৎ চাকরি থেকে বলপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য এবং ছাঁটাই করে। আমরা করোনাকালে আকস্মিক ও অন্যায়ভাবে চাকরি হারিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ি এবং সম্মানহানির শিকার হই। চাকরিচ্যুতরা জানান, আমাদের অভিযোগ ও পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্নভাবে তদন্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া পদত্যাগে বাধ্য ও ছাঁটাই করা কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়। তারপর ২ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করেনি ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা নিজ ব্যাংকের চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য আবেদনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর আবেদনসহ একাধিক মানববন্ধন পালন করি। তাতেও প্রতিকার না পেয়ে গত বছরের শেষ দিকে আমরা হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করি। তারা জানান, রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আবেদনকারীদের কেন চাকরিতে নিজ পদে পুনর্বহাল করা হবে না মর্মে ব্যাংকগুলোর প্রতি রুল জারি করেন। কয়েক মাস শুনানি শেষে সম্প্রতি হাইকোর্ট রিটকারী ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরিতে নিজ পদে পুনর্বহাল চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদনের নির্দেশ দেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে রিটের বাদী আবেদনকারী কর্মকর্তাদের আবেদন বিবেচনাপূর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো ব্যাংকারদের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংক খাতের অভিভাবক হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে পদত্যাগী এমডিদের নিজ ব্যাংকের দায়িত্বে ফিরিয়ে অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করেছেন। যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু নজিরবিহীন করোনা মহামারিকালে চাকরি থেকে পদত্যাগে বাধ্য এবং ছাঁটাই করা বহুসংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তা চাকরিতে পুনর্বহাল চেয়ে নিজ ব্যাংকের এমডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ আপনার বরাবরে আবেদন দাখিলের পাশাপাশি অবৈধভাবে চাকরিচ্যুতি এবং চাকরিতে পুনর্বহালে ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের মানববন্ধন সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ চাকরি ফেরত না পেয়ে পরিবার-পরিজনসহ অমানবিক ও মানবেতর জীবনযাপন করছি। তবে উল্লিখিত রিট পিটিশনের নির্দেশনার পর আমরা নতুন করে আশান্বিত হয়েছি যে, আপনার আন্তরিক উদ্যোগে এবার আমরা নিজ ব্যাংকের চাকরিতে পুনর্বহাল হতে পারব, ইনশাআল্লাহ। এর মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরির নিরাপত্তা বিধানসহ ব্যাংক খাত শক্তিশালী করতে আপনার বলিষ্ঠ ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে উঠে এসেছে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত বেসরকারি ছয় ব্যাংকের তিন হাজার ৩১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে ‘স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগ করেছেন তিন হাজার ৭০ জন। আর ১২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই, ২০১ কর্মকর্তাকে অপসারণ এবং ৩০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১৫ জুন করোনায় চাকরি হারানো ব্যাংকাররা রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন করেন। এতে চাকরি হারানো অর্ধ শতাধিক কর্মী অংশ নেন। এসময় তারা চাকরি ফেরত চেয়ে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা জানান, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই করোনাকালে কয়েক হাজার ব্যাংকারকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এমনকি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়ও কিছু সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে জোরপূর্বক পদত্যাগের বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরিচ্যুত ব্যাংকারদের চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ জারি করে। ওই নির্দেশনার পর চাকরিচ্যুত অনেক ব্যাংকার চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো চাকরিচ্যুত কর্মীদের পুনর্বহালে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না বলে দাবি করেন ব্যাংকাররা।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন