জন্মের পরই সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেন বাবা, উদ্ধার করল ইউএনও
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এক দিন বয়সী কন্যা সন্তানকে প্রতিবেশীকে দিয়ে দিলেন বাবা শফিকুল ইসলাম। বিষয়টি জানাজানির পর তাৎক্ষণিকভাবে ওই নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে ওই নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়নের গনাইরকুটি গ্রামে। ওই গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলামের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৩০) একদিন আগে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। অভাবের সংসারে সন্তানের ভরণ পোষণ দিতে না পারার শঙ্কায় বাবা নবজাতকটিকে শনিবার সকালে প্রতিবেশী এক মামাত বোনের হাতে তুলে দেন। এটি ওই দম্পতির পঞ্চম সন্তান। তবে স্থানীয় প্রশাসন জানায়, স্বভাবগত কারণে তারা এমনটা করেছে। এর আগেও তারা তাদের দ্বিতীয় সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন। স্থানীয় নাজমুল, শহিদুল ও আকবর আলী জানান, শফিকুলের নিজস্ব কোন জমি ও ঘর বাড়ি নেই। অন্যের বাড়িতে থাকেন। স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিকের কাজ করে খুব কষ্ট করে সংসার চালায়। এই লোকের বর্তমানে তিনটি বাচ্চা আছে। এই নিয়ে দুটি মেয়ে বাচ্চা দত্তক দিয়েছে। ওই নবজাতকের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ১৩ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। কয়েক বছর পর আরও একটি ছেলের জন্ম হয়। এরপর আমার স্ত্রীর টাইফয়েড জ্বর হয়। তারপর থেকে স্ত্রী কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এর কিছুদিন পরে আরও একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিলে সেটাকে এক প্রতিবেশীর কাছে দত্তক দেই। পরের বছর চতুর্থ কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ওই মেয়ের বয়স এখন ৩ বছর। এরপর গত শুক্রবার পঞ্চম সন্তান জন্ম নিলে শনিবার সকালে প্রতিবেশী এক নিঃসন্তান মামাতো বোনকে দেওয়ার জন্য ওই মামার হাতে তুলে দেই। শফিকুল আরও জানান, আমি সোনাহাট স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিকের কাজ করি। আমার থাকার কোনো ঘর নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থাকি। এই সামান্য আয় দিয়ে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা, তিন সন্তানের ভরণ পোষণ ও সংসারের খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে বুকের ধনকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি। শিশুকে দত্তক নেওয়া পরিবারের সদস্য আকবর আলী জানান, আমার মেয়ে নিঃসন্তান হওয়ায় শিশুটিকে দত্তক নিয়েছি। আমার মেয়ে ঢাকায় থাকে। স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) মনোয়ার হোসেন জানান, পূর্বে একটি সন্তান দত্তক দেওয়ার কথা জেনেছি। আজকের তথ্য আমার জানা নেই। তবে লোকটা খুব অভাবী। ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস জানান, বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগেও তারা তাদের এক সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন। এটা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে আপনারা যদি আপনার সন্তানকে দত্তক দেন অবশ্যই আইনগতভাবে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। টাকার বিনিময়ে যাতে তারা এমনটা না করে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলে দেওয়া হয়েছে।