হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোরের লাশ মিললো পুকুরে!
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নাভিদ ইসলাম এক কিশোরের লাশ নগরীর হাজী মুহম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শরীরে ব্যান্ডেজ জড়ানো ওই কিশোরের লাশ সোমবার সকাল ১০টার দিকে উদ্ধার করে একই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় ওই কিশোর। এরপর পাঠানপাড়া মাদ্রাসা মাঠ-সংলগ্ন পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। তবে চিকিৎসাধীন থেকে পালিয়ে ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় হাসপাতালের চার স্তরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। রোগীরা জানিয়েছেন, এত নিরাপত্তার মাঝেও কীভাবে ওই কিশোর পালিয়ে গেলো, তা তাদের বোধগম্য নয়। ১৫ বছর বয়সী নাভিদ তেরোখাদিয়া এলাকার খাদেমুল ইসলাম ও রিতা বেগমের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি নাভিদের শরীর গ্যাস লাইটারের আগুনে পুড়ে যায়। সেদিনই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকাল ৭টার পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাঠানপাড়া এলাকার একটি পুকুরে শরীরে ব্যান্ডেজ জড়ানো লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী ফায়ার সার্ভিস ও রাজপাড়া থানায় ফোন দিলে তারা গিয়ে নাভিদের লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করেন মা রিতা বেগম। তিনি বলেন, নাভিদ কেন জানি বাঁচতে চাইতো না। মাথায় সবসময় আত্মহত্যার চিন্তা কাজ করতো। অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। ২ ফেব্রুয়ারি নিজের শরীরে নিজেই আগুন দেয়। পরে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করি। নাভিদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সোমবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে আমি ওয়াশরুমে গেলে এ সুযোগে পালিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। পরে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ছুটে আসি। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নাভিদ ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছে নানির বাড়িতে। বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে সেখানেই ছিল। ২ ফেব্রুয়ারি নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, হাসপাতালের চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় ভেঙে কীভাবে ওই কিশোর বাইরে বের হলো? হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ছেলের সঙ্গে মায়ের কিছু অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অন্য রোগী ও স্বজনরা। বার্ন ইউনিটের দুজন রোগী ও কয়েকজন স্বজন জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাভিদকে নির্যাতন করতেন তার মা। যা নিয়ে বিরক্ত ছিলেন অন্য রোগী ও স্বজনরা। এর মধ্যে নাভিদের এমন মৃত্যু তাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে নাভিদ বার্ন ইউনিটে ভর্তি ছিল। শরীরের ১৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। শ্বাসনালিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে প্রায় সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ সোমবার সকাল থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে রাজপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর জানতে পারি, পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। বিষয়টি আগে জানাননি তার মা। এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। একইসঙ্গে দুর্ভাগ্যজনক। কারণ সে সুস্থ হয়ে উঠেছিল। হাসপাতালের চার স্তরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়ে পরিচালক শামীম আহাম্মদ বলেন, প্রতিদিন ৭০০-৮০০ রোগী ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। সবাইকে ওভাবে বোঝার সুযোগ থাকে না। ওই ছেলে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজে এটা দেখা গেছে। ওই সময় হাসপাতালের দায়িত্বশীল ও মানুষের যাতায়াত কম থাকে বিধায় সুযোগ পেয়েছিল। তিনি আরও বলেন, নাভিদ আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। মানসিক ভারসাম্যহীন এই কথা পরিবার আগে জানালে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নিতাম। তবে ওই ইউনিটের অন্য রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, নাভিদের মা হাসপাতালেও ছেলের ওপর নির্যাতন চালাতো। এ ধরনের ঘটনা আগে জানলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতাম। রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক বলেন, হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, নাভিদ ব্যান্ডেজ পরা অবস্থায় লুঙ্গি পরে বের হচ্ছে। পরে আর তাকে দেখা যায়নি। এ ঘটনার তদন্তে আরও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হচ্ছে। বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আপাতত অপমৃত্যু মামলা নিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করছি। হাসপাতালে পুলিশের নিরাপত্তা বলয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, পুলিশের টিম থাকলেও মাত্র চার সদস্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করে। ওখানে সব নিরাপত্তার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে নাভিদকে হাসপাতাল থেকে একাই বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে যে পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তার আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। কাজেই এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সবকিছু খোলাসা হবে।