শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আতিক উল্লাহ, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আতিক উল্লাহ, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র প্রধান কর্মকর্তা (সিও) মো. আতিক উল্লাহ খানের স্ত্রী মিনা আজমিন স্বামীর পাঠানো ভয়েস শুনে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বামীর চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়া এই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন স্বজনরা। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ইফতারের পর আতিক উল্লাহ তার স্ত্রীর কাছে একটি অডিও বার্তাটা পাঠান। সে বার্তায় আতিক উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলেছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিও। জিম্মি নাবিক আতিকের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায়। মা, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকেন শহরের নন্দনকানন এলাকায়। গতকাল বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকাননের রথেরপুকুর পাড় এলাকার সুবর্ণ ফরিদ টাওয়ারের আতিক উল্লাহ খানের বাসায় গিয়ে জানতে চাইলে তার বৃদ্ধ মা ও সন্তানরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলেকে জলদস্যুরা জিম্মি করে সোমালিয়ায় নিয়ে গেছে এ খবর পাওয়ার পর থেকে পরিবারে সদস্যদের মধ্যে চলছে কান্নার রোল আর আর্তনাদ। জিম্মি মো. আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনুর বেগম সারাক্ষণ ক্রেস্টে বাঁধানো ছেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছেন। সত্তরোর্ধ্ব এই নারীর একদিকে বয়সের ধকল, অন্যদিকে নানান রোগ। কিন্তু মায়ের সব শারীরিক যন্ত্রণা যেন আজ চাপা পড়ে গেছে ছেলেকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তার অতলে। কান্না একটু থামিয়ে তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমার কাছে একটা দিন এখন এক বছরের মতো লাগছে! ছেলেকে সুস্থ ফিরে পেতে হলে নাকি কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে। এই দুঃখ সয়ে ততদিন কি আমি বাঁচব!’ দাদির কান্না দেখে পাশে বসা ৭ বছরের নাতনি উনাইজা মাহবিন তার চোখের জল মুছে দেয়। ছোট্ট মাহবিনের হাত ছুঁয়ে দাদির চোখের জল গড়িয়ে পড়ে বাবার ছবির ওপর। ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ, অন্যদিকে ছেলের স্ত্রীও অসুস্থ। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিন নিয়ে খুবই উৎকণ্ঠায় আছেন শাহনুর বেগম। তিনি বলেন, ‘ছেলে সর্বশেষ ভয়েস মেসেজে আমার পুত্রবধূকে জানিয়েছিল- ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের মেরে ফেলবে। সেই বার্তা পাওয়ার পর থেকেই সে অসুস্থ। এমনিতেই ও অন্তঃসত্ত্বা। তার ওপর স্বামীর এমন অবস্থা শুনে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে কয়েকবার জ্ঞান হারানোর পর  আমরা তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসার পর মাঝরাতে নিয়ে আসি। এখনো সে অসুস্থ। বৃদ্ধা শাহানা বেগম বলেন, ‘তিন মেয়ের জন্মের পর জম্মেছিল আমার ছেলে আতিক উল্লাহ। সে ছেলে বড় হয়ে নিয়েছে পুরো পরিবারের দায়িত্ব। ২০০৭ সাল থেকে জাহাজে কর্মরত আছে। তারপর থেকে পরিবারটি টেনে নিয়ে চলেছে। এখন ছেলের ভয়ঙ্কর বিপদ। ছেলের এমন দুঃসময়ে আমরা কীভাবে ভালো থাকি! জানি না আমার ছেলে কেমন আছে, কী খাচ্ছে। আমাদের আর খাওয়া নেই, ঘুম নেই। তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম রোজায় ইফতার করতে বসেছিলাম। খেজুরটা মুখে দিলাম মাত্র। ওই সময়েই ছেলের ফোন। জানালো, তাদের জাহাজে সোমালিয়ার জলদস্যুরা আক্রমণ করেছে। জাহাজ এখন জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। ছেলেসহ জলদস্যুদের হাতে অবরুদ্ধ ২৩ নাবিককে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে শাহনুর বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেটা যেমন আমাদের একমাত্র অবলম্বন, অন্যারাও তাদের পরিবারের কাছেও তেমন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন মা, তিনি মায়ের যন্ত্রণা বুঝবেন। তিনি যেন এই বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেন। আমাদের ছেলেদের যেন সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাই, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বাসায় আসা আতিক উল্লাহের বন্ধু জুলকার নাইম বলেন, মঙ্গবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমাকে ভয়েস মেসেজ পাঠায় আতিক। সে বলে, ‘আমার জন্য দোয়া করিস, আমাদের পরিবারের দেখাশোনা করিস।’এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।’

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন