১৪৪ ধারা অমান্য করে নড়াইল সদরের তুলারামপুর ইউনিয়নের চামরুল মৌজায় ১১ শতক জমির সীমানা পিলার ভেঙ্গে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা
নড়াইল প্রতিনিধি ১৪৪ ধারা অমান্য করে নড়াইল সদরের তুলারামপুর ইউনিয়নের চামরুল মৌজায় ১১ শতক জমির সীমানা পিলার ভেঙ্গে দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী জমির মালিক মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, গত ৩ মার্চ এডিএম কোর্টের আদেশে ১১ শতক জমি বুঝে ভোগ-দখলের জন্য আমরা সীমানা পিলার দিই। কিন্তু, কোর্টের আদেশ অমান্য করে সাফিয়া বেগম ও শিহাবুর রহমান শিহাবসহ তাদের লোকজন সম্প্রতি আমার জমির সীমানা পিলার ভেঙ্গে দিয়েছে। এছাড়া ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের নামে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। ভুক্তভোগীরা জানান, চামরুল এলাকার এসএ রেকর্ডীয় মালিক মেছের মোল্যা মারা যাওয়ার পর ওয়ারিশ সূত্রে তার মেয়ে ছবুরোন নেছা কাছ থেকে মমতাজ বেগমের দুই বোন সাবিনা ও রোজিনা ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ২৩৯ নম্বর দলিলমূলে ১১ শতক জমি তাদের (সাবিনা ও রোজিনা) নামে নামপত্তন করেন। সাবিনা ও রোজিনার কাছ থেকে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মমতাজ বেগম ১০৭৮৫ নম্বর দলিল মূলে ওই জমি মালিকপ্রাপ্ত হন। তবে প্রতিপক্ষ সাফিয়া বেগমসহ তাদের লোকজন জমির মালিকানা বুঝে নিতে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী জমির মালিক মমতাজ বেগমের স্বামী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, যার কাগজপত্র ঠিক আছে; তিনিই জমি পাবেন। আদালতও আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু, প্রতিপক্ষরা আমাদের বাধা দিচ্ছেন। আমরা সঠিক বিচার চাই। মমতাজ বেগমের মেয়ে মিমি খানম বলেন, শিহাব দাঁড়িয়ে থেকে গত ৯ মার্চ আমাদের জমির পিলার তুলে ফেলেছে। আমাদের পরিবারের মানসম্মান ক্ষুন্ন করতে প্রতিপক্ষের শান্তা, জেসমিন, সাফিয়া, সখিনা বেগম, শাহিনা, নবীরসহ কয়েকজন আমাদের সম্পর্কে অনেক কটূক্তি করেছে। আমার বাবা-মাকে মানসিক ভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমার বাবা-মা সরকারি চাকরি করেন। তাদের পক্ষে বে-আইনি কাজ করা সম্ভব না। প্রতিপক্ষের কটূক্তি ও হুমকিতে আমাদের পরিবারে কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় কে নেবে ? প্রতিবেশি সুমি আক্তার জানান, মমতাজ বেগমসহ তার পরিবারের নামে ফেসবুকে যে ধরণের অপপ্রচার করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। অপর প্রতিবেশি লুৎফার রহমান মোল্যা বলেন, মমতাজ বেগম কারো মাথায় বাড়ি (ক্ষতি) দেননি যে তার সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলতে হবে। সম্মাননি লোকের মান আল্লাহ রাখেন। আহাদ আলী বলেন, বিবাদপূর্ণ ১১ শতক জমি নিয়ে তুলারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ নিয়ে একাধিকবার সালিশ হয়েছে। কিন্তু এখনো সমাধান হয়নি। এরপর এডিএম কোর্টে মামলা হওয়ার পর মমতাজ বেগমের পক্ষে রায় হয়েছে। পরবর্তীতে জমির মালিক মমতাজ বেগম সীমানা পিলার দেয়ার পর প্রতিপক্ষরা তা ভেঙ্গে ফেলেছে। একই দাগে আমারও ১১শতক জমি রয়েছে। আমরা সুষ্ঠু সুন্দর সমাধান চাই। তুলারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আব্দুল গফফার বলেন, বিরোধপূর্ণ ওই জমি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে উভয়পক্ষের আবেদন দেয়ার পর আমরা মীমাংসার সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, একে-অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার না করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে হবে। সঠিক কাগজপত্র যার আছে, তিনিই জমির মালিক হবেন। নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আজিজুর রহমান বলেন, নামপত্তনের মধ্যদিয়ে ওই ১১ শতক জমির মালিক হয়েছেন মমতাজ বেগম। নিয়মানুযায়ী তিনি ভোগ দখল করবেন। অভিযুক্ত সাফিয়া বেগম বলেন, আমার ফুফুর কাছ থেকে মমতাজ বেগমের দুই বোন জমি কেনেন। দীর্ঘদিন জমির একটি অংশ ভোগ-দখল করে আসার পর মমতাজ বেগম তার দুই বোনের কাছ থেকে ১১ শতক জমি কেনেন। মমতাজ জমি কেনার পর অন্য একটি অংশ দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর জমি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। ওই জমিতে আমি ঘর করতে চাইলে আদালত ১৪৪ ধারা জারি করেছে। শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, সাফিয়া আমার চাচাতো বোন। তার বাবা-মা ও স্বামী মারা গেছেন। কোনো ভাইও নেই। বাবার ভিটায় সাফিয়া বসবাস করে। এই জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ঝামেলা চলছে। মমতাজ বেগমের বোন দীর্ঘ ১২ বছর জমিটা ভোগ-দখল করছে। মমতাজরা সাফিয়াকে জ্বালাতন করে। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার সালিশ হয়েছে। জমির মীমাংসার স্বার্থে আইন-আদালতসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মেনে নেবো। এ ঘটনায় আদালতে মামলা আছে। আদালতের মাধ্যমে হোক, স্থানীয় ভাবে হোক, যে সুষ্ঠু সমাধান হবে, আমি এবং আমার বোন (সাফিয়া) তা মেনে নেব। তারা (মমতাজ) যদি শান্তি চায়, তাহলে যে কোনো সময় নিষ্পত্তি হবে।