গ্রামীণ এলাকায় শহর গড়ে উঠছে
গ্রামগুলো চির চেনা রূপ হারিয়ে এখন ছোট ছোট শহর গড়ে উঠেছে। দেশের প্রতিটি গ্রাম এখন শহর।মাটির কাঁচা রাস্তা গুলো পাকা হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো।খড়ের চুলার জায়গায় এখন রাইস ও কারি কুকারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় এখন আর কেরোসিন তেল দিয়ে ল্যাম্প,হারিকেন, মাটির তৈরী ঘর ও চোখে পড়ে না।জল-জমি-জনতার দেশ, আমাদের এই বাংলাদেশ। অপার সম্ভাবনার এই দেশটিকে ঘিরে ছিল বঙ্গবন্ধুর হাজারো স্বপ্ন। দুঃখী, মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী মহাচিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব। তিনি বলতেন, আমার জীবনের একমাত্র বাসনা বাংলার মানুষ যেন পেট ভরে খেতে পায়,পরনে কাপড় পায়| তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। গ্রামের মানুষ তিন বেলা পেট ভরে ভাত খাচ্ছে। পাল্টে গেছে গ্রামীন অর্থনৈতিক চিত্র। শহরের মতো গ্রামেও এখন বহুতল ঘর বাড়ি নির্মান হচ্ছে।মাটির বাড়ি বা কুড়ে ঘর চোখে পড়ে না। মাটির ঘর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গ্রাম এখন শহরে পরিণত হয়েছে। মাটির কাঁচা রাস্তাগুলো পাকা হয়েছে।সন্ধ্যা নামলে ঘুট ঘুটে অন্ধকার চারিদিকে ঝি ঝি পোকা আর শেয়ালের হুকা হুয়া ডাক।শরীর শিহরে উঠত।তাই বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়ন ভাবনা ছিল আকাশচুম্বী।রবি ঠাকুর জমিদারের সন্তান হয়েও ভাবনায় রেখেছিলেন গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের কল্যাণ। স্বনির্ভর গ্রাম প্রতিষ্ঠা ও গ্রামীণ অর্থনীতি পূর্নরুদ্ধারের ব্যাপারে কবির ভাবনা ছিল সুদূরপ্রসারী। রবীন্দ্রনাথ নিজেই লিখেছেন, আমার জন্মগত পেশা জমিদারী, কিন্তু আমার স্বভাবগত পেশা আসমানদারী। জমিদারের সন্তান হিসেবে তিনি যতো না খাজনা আদায় করেছেন, তার থেকে অনেক বেশি গ্রাম বাংলার সৌন্দর্যসুধা প্রাণভরে উপভোগ করেছেন। সেই অঝোপাড়া গ্রাম গুলোকে শহর বানাতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে সুফল অর্জন করেছে । গ্রামীন রাস্তা গুলো বিদ্যুতের ঝললকানি আলোয় আলোকিত। মোড়ে মোড়ে দোকান পাট,বাজার স্থাপন হয়েছে। ঘরে ঘরে , বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ডিস লাইন।ঘরে বসে মানুষ পাচ্ছে এখন সকল ডিজিটাল সেবা। “শেখ হাসিনার অঙ্গিকার গ্রাম হবে শহর ” এখন পুরো বাংলাদেশ একটি শহরে রুপান্তরিত হয়েছে। শহরের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রামের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। নতুন প্রজন্ম কখনো বুঝতে পারবে না প্রকৃত গ্রামীণ পরিবেশ কেমন ছিল। গেঁও শব্দটির যথার্থতা এখন গ্রামে নেই। বর্তমান সরকারের আমলে গ্রামের মানুষের স্থায়ী অর্থনৈতিক সক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পারিবারিক চাহিদা মোকাবিলায় তাই প্রমাণ করেছে। গ্রাম ও শহরের অর্থনৈতিক পার্থক্যের দূরত্ব কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। শ্রমজীবী দিনমজুর শ্রেণি এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে কোনো না কোনো কাজ করছেন। মাসিক তাদের আয় ১৫-১৭ হাজার টাকা। একজন বেসরকারি কলেজ শিক্ষকের মাসিক বেতন সর্ব নিন্ম ২৩০০০ – ৫০,০০০হাজার টাকা। বাড়িতে থেকে সে এত টাকা আয় করতে পারতেছে।গ্রামে দিন হাজিরায় কাজের লোক পাওয়া যায় না। চুক্তিতে শ্রমিক নিতে হয়। এভাবে এখন শহরের মতো গ্রামেও কর্মক্ষেত্র বেড়েছে। কয়েকবছর আগেও শীত মৌসুমে নতুন ধানের নাড়ায় (খড়ের আঁটি) গ্রামে ঘরের ছাউনি ও মাটির ঘর নির্মাণের ধুম পড়ে যেত। এখন গ্রামে কোথাও মাটির ঘর চোখে পড়ে না। মাটির ঘর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ঘর এখন গ্রামবাংলার ঐতিহ্য হিসেবে শহরে স্থান করে নিয়েছে। দিন মজুর শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ মাটিi ঘরে বসবাস করত। স্বল্প আয়ের মানুষেরা খড়ের চালা ও খড়ের বেড়া ব্যবহার করত সাদামাটাভাবে । বর্তমানে গ্রামে ইট সিমেন্ট দিয়ে তৈরী ছাদ ঢালাই বা টিনের ছাউনি নির্মাণ হচ্ছে ।ঘরের ভিতর চায়না সেলিং জায়গা করে নিয়েছে। কোনো কোনো গ্রামে তো এখন বহুতল ভবন চোখে পড়ে। পাঁকা ইটের বাড়ির স্বাভাবিক ঘটনা। ২০০০ সালের দিকে গ্রামে সাধারণত মাটির ঘর ছিল সব গ্রামে। ইটের কিংবা টিনের ঘর ছিল শহরে। এর প্রধান কারণ গ্রামের অর্থনৈতিক চিত্র ছিল কৃষিখাত ও কৃষি নির্ভর। গ্রামে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকের বসবাস ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নাজুক। পরিবহন ব্যবস্থা ছিল গরুর গাড়ি বা পায়ে হেঁটে চলাচল। গ্রাম হতে শহরকে খুব দূরে মনে হত। এখন চিত্র পাল্টে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল-পরিবর্তন হয়েছে। তৈরি হয়েছে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় যান্ত্রিককরণ। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে। টিন, ইট, সিমেন্ট ও নির্মাণ সামগ্রী সহজলভ্য হয়েছে। কালে আবর্তে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র এখন গ্রামে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে সরকার নানা উদ্যোগ wন‡q‡Q। ফলে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। যার প্রধান সূচক গ্রাম হতে মাটিi ঘর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন চোখে পড়ে না মাটি বা কুঁড়েঘর। কোনো কোনো গ্রামে কালেভদ্রে মাটি ঘর দেখা যায় দুই- একটা। সেটাও কোনো সৌখিনতার জন্য অনেকে রেখে দিয়েছে। বেড়েছে বাসস্থানের ও খাদ্যের জন্য ব্যয়ের সক্ষমতা। এই গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রাম হতে বিলুপ্তি হয়ে গেছে মাটির ঘর। সেই জায়গায় এখন ইট সিমেন্টের ঘর চোখে পড়ে।প্রায় প্রতিটি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। রয়েছে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। শতভাগ স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। এখন শহরের আমেজ গ্রামে। লেখাপড়া জন্য লোকজন শহরে আসত।এখন গ্রামের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ন জায়গায় ডিগ্রীকলেজ পর্যন্ত স্থাপিত হয়েছে।পার্বতীপুর উপজেলায় ৭৬ টি মাধ্যমিক, ডিগ্রী কলেজ ১২টি, দাখিল মাদরাসা ৩৯ টি, এস এসসি ভোকেশনাল ১১ টি,কামিল মাস্টার্স অনার্স মাদরাসা১ টি। অথচ আজ থেকে ১৫ বছর পুর্বে গ্রামের লোকজন লেখা পড়ার জন্য শহরে আসত। পার্বতীপুর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।গ্রামের লোকজন হাটের দিনে বাজার করত।হাট সপ্তাহে ১ বা ২ দিন বসত।কয়েকটি হাট ছিল খুবই বিখ্যাত।তার মধ্যে খয়ের পুকুর, ডাঙ্গার হাট,বুড়া হাট,যশাই ও আমবাড়ি,দাগলাগন্জ,বেনিরহাট ।গ্রামের হাট বাজার এখন প্রতিদিন সারাবেলা খোলা। অত্যাধুনিক সব ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র পাওয়া যায়। সকল প্রকার ব্যবহারিক ইলেক্ট্রনিক পণ্য টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, মাইক্রোওভেন, গ্যাস সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা, নানা ধরনের প্রসাধনী, ফলমূলসহ দেশী-বিদেশী সকল প্রচলিত পণ্য পাওয়া যায়।
মোস্তাকিম সরকার
সম্পাদক
মুক্তিনিউজ২৪.কম, E-mail. msarkarpbt@gmail.com