চট্টগ্রামে বস্তিতে আগুন ‘এখন কোথায় যাব, মেয়েকে কীভাবে অপারেশন করাব’
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক ঘরে পুড়ে গেছে। ঘরের সঙ্গে পুড়েছে তাদের সর্বস্ব। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার থেকে শুরু করে দামি জিনিসপত্র সবকিছুই পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। আগুনের ভয়াবহ তাণ্ডবে তারা মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়েছেন। অসুস্থ মেয়ে অর্পিতা দাশের অপারেশনের টাকা জমাতে শুরু করেন চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে কর্মরত মা সুগন্ধা দাশ। ৫০ হাজার টাকা জমিয়ে যত্ন করে রেখেছিলেন বাসায়। অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় থাকা মেয়েকে কিছুদিন আগে ভর্তি করিয়েছেন হাসপাতালেও। কিন্তু তার আগেই আগুন কেড়ে নিয়েছে সুগন্ধার সব, মেয়ের অপারেশনের টাকাও। সেসব ভেবে কান্না থামছে না এই মধ্যবয়সী নারীর। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ঘরের সামনে বসে তিন বিলাপ করছিলেন, ‘আমি এখন কোথায় যাব, মেয়েকে কীভাবে অপারেশন করাব।’ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে সেবিকা বন্ধুর কাজ করেন সোহাগী দাশ। আগুন লাগার সময় ডিউটি ছিল আগ্রাবাদে। খবর পেয়ে দ্রুত চলে আসেন। ঘটনার সময়ে বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমার স্বামীও ঘরে ছিল না। ঘরে ছিল শুধু ছোট মেয়ে। আগুন দেখে মেয়ে দ্রুত বের হয়ে যায়। এত দ্রুত আগুন ছড়িয়েছে কিছুই বের করা যায়নি। ঘরে মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকার জন্য আক্ষেপ করত করতে সোহাগী বলেন, ছোট মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। সব ঠিক থাকলে বৈশাখেই বিয়ে। খেয়ে না খেয়ে টাকা জমিয়ে মেয়ের বিয়ের জন্য ৬২ হাজার টাকা রেখেছিলাম। সাথে এক ভরি অলঙ্কারও বাসায় ছিল। আগুনে আমার সব শেষ। শুধু সোনালী ও সুগন্ধা নয়, এভাবে নিঃস্ব হয়েছে শতাধিক পরিবার। যাদের সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে বস্তিতে আগুন লাগার সংবাদ পান ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও ছয়টি ইউনিট। ৯ ইউনিটের চেষ্টায় এক ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। নগরীর ফিরিঙ্গি বাজার মেরিনার্স রোডের সঙ্গে লাগোয়া টেকপাড়া বস্তি ও এয়াকুব নগর লইট্টা ঘাটা বস্তিতে লাগে এ আগুন। টেকপাড়া বস্তিতে জেলে সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারের বসবাস। জেলে সম্প্রদায় হলেও তাদের অনেকেই বিভিন্ন পেশায় আছেন। লাগোয়া এয়াকুব নগর লইট্টা ঘাটা বস্তিতে নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশার লোকজনের বসবাস। চোখের সামনে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছোট ঘর ও সহায় সম্বল যখন পুড়ে যাচ্ছিল এ দুই বস্তির বাসিন্দাদের, তখন কিছুই করার ছিল না। আগুন নেভানোর পর ছিল শুধু তাদের আহাজারি, হতাশা আর সহায় সম্বল হারানোর বেদনা। ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সোমবার বেলা ১টা ২০ মিনিটে ওই বস্তিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ৯টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে তিন হাজার টাকা দেবেন মেয়র রেজাউল
ফিরিঙ্গিবাজারে বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে তিন হাজার টাকার নগদ অর্থ সহায়তা এবং পুরুষদের লুঙ্গি ও নারীদের শাড়ি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শনকালে সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার দুপুর ও রাতের খাবারের আয়োজনেরও ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনর্নির্মাণের জন্য টিন দেওয়ার ঘোষণা দেন মেয়র। পরিদর্শনকালে মেয়র রেজাউল বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সমন্বয় করছি। আমাদের তিন জন কাউন্সিলরের তত্ত্বাবধানে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিষ্কার করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে তিন হাজার টাকার নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। পুরুষদের লুঙ্গি ও নারীদের শাড়ি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার দুপুর ও রাতের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনর্নির্মাণে টিন দেওয়া হবে।