বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

দিনাজপুরে সড়ক প্রশস্তকরণের বলি হচ্ছে শত শত গাছ

দিনাজপুরে সড়ক প্রশস্তকরণের বলি হচ্ছে শত শত গাছ

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : দাবদাহে পুড়ছে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে তাপমাত্রার পারদ। এদিকে সড়ক প্রশস্ত করার নামে নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে শত শত গাছ। রাস্তায় ছায়াশীতল পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালনকারী এসব বৃক্ষ নির্বিচারে নিধনে ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রতিনিধিরা বলছেন সড়ক প্রশস্ত করতে সরকারি নিয়ম মেনেই এসব গাছ কাটা হচ্ছে।

জানা গেছে, ১৯৯০ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাস্তার পাশে জেলা পরিষদ বোচাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে মেহগনি, বকাইল, পাকুড়, কদম, কৃষ্ণচূড়া, কাঁঠাল, আম, কামরাঙাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করেছিল। সেই সড়কগুলো প্রশস্তকরণের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। কিন্তু রাস্তা প্রশস্তকরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ বছর বয়সী গাছগুলো। গত ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদ বোচাগঞ্জ উপজেলার পুলেরহাট বাজার, মাধবপুর, ডাকবাংলা অডিটোরিয়াম মোড়, জালগাঁও, বকুলতলা এলাকায় সাতটি লটে ২৯৮টি গাছ বিক্রির ইজারা প্রদান করে। আর গত ১৬ এপ্রিল গাছ কাটার কার্যাদেশ প্রদান করে।

স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে যে গাছ সীমানার মধ্যে পড়বে সেটা কাটুক। কিন্তু রাস্তা থেকে অনেক দূরের গাছগুলো কেন কাটা হচ্ছে? আমরা তাদের বাধা দিলে কোনো কথা শুনে না। তারা তো গাছ কেটে এলাকাকে মরুভূমি বানায় দিচ্ছে। রাস্তার গাছ কাটে কিন্তু নতুন করে রোপণ করে না। দিনাজপুরে অনেক রাস্তা বড় করতে গিয়ে গাছ কাটছে। নতুন করে রাস্তা তৈরি হওয়ার পর বছরের পর বছর পার হলে আর গাছ রোপণ করা হয় না।

পথচারী রবিন রায় বলেন, গরমের পর যদি গাছগুলো কাটা হত তাহলে কি তাদের অনেক বড় ক্ষতি হত? কিন্তু তারা এই গরমের মধ্যে গাছগুলো কেটে সাবাড় করে দিল। রাস্তায় গাছগুলোর ছায়া থাকত, দেখতেও সুন্দর লাগে। কিন্তু রাস্তা বড় করতে গিয়ে যে গাছগুলো কাটার দরকার নেই সেগুলোও কেটে নিচ্ছে।

বোচাগঞ্জ উপজেলার সমাজকর্মী মাহবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিনাজপুর-সেতাবগঞ্জ সড়কে প্রায় ৫০ বছর আগে লাগানো শত শত গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। সড়ক প্রশস্ত করা হোক তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। রাস্তা প্রশস্ত করা হবে দু’দিকে তিন ফুট করে। কিন্তু রাস্তা থেকে ১০ ফুট দূরের গাছগুলোও কেটে ফেলা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, চলমান তাপপ্রবাহ ও প্রকৃতির যে অবস্থা, এই অবস্থায় গাছগুলো নির্বিচারে কেটে ফেলে আরও একটি দুরবস্থার সৃষ্টি করছে দিনাজপুর জেলা পরিষদ। অবিলম্বে গাছ কাটা বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো কিনে নেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের কর্মকর্তার তদারকিতে কার্যাদেশ মোতাবেক গাছগুলো কাটা হচ্ছে।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রইসউদ্দীন জানান, দিনাজপুর-সেতাবগঞ্জ সড়কে আটটি বাজারে সড়ক সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এই সড়কটির প্রশস্ত রয়েছে ১৮ ফুট। আর বাজারগুলোতে এই সড়কের প্রশস্ত করা হবে ২৪ ফুট। তাই আটটি বাজারের সড়কের দুপাশে তিন ফুট করে মোট ছয় ফুট প্রশস্ত করা হবে।

দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যোগদানের আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে একটি রিকুইজেশন এসেছিল। রাস্তার উন্নয়নে কাজ করা হবে, তাই এই গাছগুলো সরিয়ে দেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রিকুইজেশন মোতাবেক বন বিভাগ থেকে মূল্য সংগ্রহ, জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং বিভাগীয় কমিশনার অফিসে অনুমোদন করা হয়েছে। এরপর আমরা টেন্ডার দিয়েছি। কিন্তু আমার কাছে অভিযোগ আসছে যে- কিছু গাছ আছে রাস্তা থেকে অনেক দূরে সেগুলোও কাটা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারা আমাকে কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। একটি গাছ বড় করতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু এভাবে গাছ কাটায় আমি অবাক হয়েছি। আমি বিষয়টি নিয়ে মিটিংয়ে কথা বলেছি। ভবিষ্যতে রাস্তা থেকে দূরের গাছগুলো যেন না কাটা হয়।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন