ঘোড়াঘাটে গাড়িতে প্রধান শিক্ষিকার বিদায়
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ গলায় পুষ্প মাল্য, হাতে সম্মাননা স্মারক ও নানা ধরনের উপহার নিয়ে সুসজ্জিত গাড়ি করে বাড়ি ফিরলেন তিনি। দীর্ঘ ৩৩ বছরের কর্মজীবনের শেষ কর্ম দিবসে এভাবেই বাড়ি ফিরে গেলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকাল ৩ টায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌরশহরের দক্ষিণ জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য ছিল এমন। প্রধান শিক্ষক লায়লা আঞ্জুমান আরা দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে গেছেন। তাই প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা এসব আয়োজন করে। এ আয়োজন দেখে লায়লা আঞ্জুমান আরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা অফিসার আব্দুল ওয়াকিল এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল আল মামুন কায়সার শেখ, ইউ.আর.সি ইন্সট্রাক্টর শহিদুল ইসলাম, সাবেক মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন, থানা অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক,অত্র বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মনোরঞ্জন মোহন্ত ভূট্টু। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা দায়িত্ব ছিলেন, সহকারী শিক্ষক আনিছুর রহমান। এসময় শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আকতার জামিল এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী মৃত্তিকা মোহন্ত মানপত্র পাঠ করেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, লায়লা আঞ্জুমান আরা ১৯৯৫ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ৩৩ বছর শিক্ষকতা করে এই দিন অবসরে যান।তাই শিক্ষকতা জীবনের শেষ দিনে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এমন আয়োজন দেখে তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
তাঁর অবসর উপলক্ষে বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত সভায় লায়লা আঞ্জুমান আরা বলেন, আমি বিদায় নিচ্ছি কিন্তু আমার দোয়া রেখে গেলাম। তোমরা লেখাপড়া করে যখন অনেক বড় হবে, তখন আমাদের কথা মনে পড়বে। তোমরা নিজেদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
সাবেক মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, তিনি অনেক ভালো ও উদার মনের মানুষ। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ প্রিয় ছিলেন। কখনো রাগ বা ক্ষোভ দেখিনি। নিজের সন্তানের মতো করে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন। তিনি অত্যান্ত উদার মনের মানুষ ছিলেন। তিনি অবসর জনিত কারণে বিদায় নিয়েছেন। সবাইকে মানতেই হবে। আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু ও সুস্থ্যতা কামনা করছি।
ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষক যখন তার চাকরিজীবন শেষে বাড়ি ফিরে যান তখন তিনি অনেক কষ্ট পান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের রেখে চলে যাওয়া খুব কষ্টের। বিদায়ের কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্যই কর্তৃপক্ষ ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন করেছে। প্রতিটি শিক্ষকের বিদায় এমন হওয়া উচিত।
ক্যাপশনঃ সুসজ্জিত গাড়ি ও সম্মাননা স্মারক উপহার দিয়ে বিদায় প্রধান শিক্ষিকার।