বুধবার, ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

সদ্য সংবাদ:

মৌলভীবাজারে পর্যটন ব্যবসায় ভাটা, উন্নয়ন না হওয়াকেই দায়ি করছেন সংস্লিষ্টরা

মৌলভীবাজারে পর্যটন ব্যবসায় ভাটা, উন্নয়ন না হওয়াকেই দায়ি করছেন সংস্লিষ্টরা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: উচু নিচু টিলা, সবুজ চা বাগান, আনারস, লেবুসহ নানান ফল ও ফুলে সমৃদ্ধ চায়ের দেশ মৌলভীবাজারে কমে গেছে পর্যটকদের প্রদচারণা। জেলায় চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন স্পট ছাড়াও রয়েছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন এবং বাইক্কা বিলসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।
পর্যটন শিল্পের সাথে সং¯িøষ্টরা বলছেন, শিল্পের সম্ভাবনা পূর্ণরূপে কাজে  না লাগানো এবং জেলার পর্যটন খাতে আশানুরূপ উন্নয়ন না হওয়াতে দিন দিন কমছে পর্যটক।
পর্যটন খাতে সং¯িøষ্টরা বলছেন, মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো শীত মৌসুমে পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত থাকে। গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দু সপ্তাহে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বিদেশি পর্যটকসহ প্রায় ১৮ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন। যেখানে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। অন্য এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, লাউয়াছড়া উদ্যানে প্রতিবছর গড়ে দুই লাখ দর্শনার্থী ভ্রমণ করলেও, গত অর্থবছরের সাত মাসে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ছিল ৬৮,৩৮০ জন, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ কম। এতে করে নিশ্চিত করে বলা যায় মৌলভীবাজারে পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০০৮ সালে মৌলভীবাজারকে পর্যটন জেলা ঘোষণা করা হলেও দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময়ে এই খাতের উন্নয়নে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ সীমাবদ্ধ থেকে গেছে গুটিকয়েক পর্যটনকেন্দ্রের সংরক্ষণে। ফলে এখানকার পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। শ্রীমঙ্গলের পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ভেতরেই অন্যান্য গন্তব্যের তুলনায় মৌলভীবাজারের পর্যটক সংখ্যা কমছে। এর কারণ হিসেবে তারা পর্যটনকেন্দ্রগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না থাকা, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থা, এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবকে দায়ী করেন। পর্যটন সেবা সংস্থা মৌলভীবাজার-এর অ্যাডহক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সেলিম আহমেদ জানান, মৌলভীবাজারের পর্যটন খাতের যদি কোনো উন্নয়ন হয়ে থাকে তবে তা ব্যক্তি উদ্যোগে। সরকারি উদ্যোগে পর্যটনের দৃশ্যায়িত কোনো উন্নয়ন দেখা যায়নি। তিনি বলেন, পর্যটনের সবচেয়ে বড় খাত আবাসন। সরকারি সহযোগিতা না থাকায় রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নানান সমস্যায় ভূগছেন হোটেল রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটনের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই।অপরদিকে, পর্যটকদের জন্য নেই পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার। পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তার ঘাটতিও একটি বড় সমস্যা। মৌলভীবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অধিকাংশের মতে, “এখানকার হোটেল-রিসোর্টের ভাড়া বেশি। সেই তুলনায় সেবার মান ততটা ভালো নয়। নতুন কোনো আকর্ষণীয় জায়গা কিংবা সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকেই একবার আসার পর দ্বিতীয়বার আসতে চান না। ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসন থেকে পর্যটন শিল্পের বিকাশে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। একইভাবে ২০২২ সালে পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোরও কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
সুত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে শ্রীমঙ্গলে বেশ কয়েকটি রিসোর্ট যেমন হিলভিউ গেস্টহাউজ ও লাউয়াছড়া ইকো কটেজ বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে নতুনভাবে সাজানো, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য উন্নত সেবা নিশ্চিত করা, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর প্রচার-প্রসারে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িতরা।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমরা পর্যটনকেন্দ্রগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে নানা কাজ হাতে নিয়েছি। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় একজন এডিসিকেও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এই কাজে সরকারি-বেসরকারি উভয় মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন